পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তীর্থ দর্শনের ফাঁকে আমরা দিল্লী, আগ্রা প্রভৃতি ঐতিহাসিক জায়গাগুলিও দেখে নিয়েছিলাম। সব জায়গাতেই সাধুসন্ন্যাসী যতজনের সঙ্গে পেরেছি দেখা করেছি। এ ছাড়া কয়েকটি আশ্রম এবং গ‍ুর‍ুকুল ও ঋষিকুল বিদ্যায়তনও পরিদর্শন করেছিলাম। শেষোক্ত বিদ্যায়তন দুটি প্রাচীন ভারতীয় আদর্শে পরিকল্পিত। এদের মধ্যে গ‍ুর‍ুকুলই একটু সংস্কারপন্থী, বিশেষ করে জাতিভেদের ক্ষেত্রে। হরিদ্বারের একটি আশ্রমে আমাদের বেশ মুশকিলে পড়তে হয়েছিল। আশ্রমবাসীরা আমাদের সহজভাবে গ্রহণ করতে ইতস্তত করছিলেন, কারণ তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না আমরা বাস্তবিকই ধর্মভাবাপন্ন, না ধর্মের ছন্মবেশে একদল বিপ্লববাদী বাঙালী যুবক। দুমাস ধরে এইভাবে তীর্থে তীর্থে ঘুরে অনেক ধার্মিক পুর‍ুষের দেখা পেয়েছিলাম সত্যি, কিন্তু সেই সঙ্গে হিন্দু সমাজব্যবস্থার মূল গলদগুলিও আমার কাছে ধরা পড়েছিল। সাধুসন্ন্যাসীদের সম্বন্ধে আমার ধারণা একেবারে বদলে গিয়েছিল। প্রথম আমার চোখ খোলে যেবার হরিদ্বারের একটি ভোজনালয়ে আমাদের খেতে দিতে আপত্তি জানালো। বাঙালীরা মাছ খায়, কাজেই তারা খ‍ৃস্টানদের মতোই অপবিত্র—অতএব ভোজনালয়ে আর সকলের সঙ্গে বসে খাবার অধিকার তাদের নেই। আমাদের নিজের নিজের বাসনে ভোজনালয় থেকে খাবার নিয়ে এসে নিজেদের ঘরে বসে খেতে হত। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিল ব্রাহ্মণ, কিন্তু সেও এই ব্যবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। বুদ্ধগয়ায়ও একই ব্যাপার। বারাণসীর রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষের পরিচয়পত্র নিয়ে আমরা একটি মঠে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলাম। খাওয়ার সময়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করা হল আমরা আলাদা আলাদা বসে খাবো কি না, কারণ আমরা সকলে

৮৬