পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সে সময়ে শঙ্করাচার্যের মতবাদকেই হিন্দুশাস্ত্রের সাৱরস্ত‍‌ু বলে আমি জানতাম। অবশ্য শঙ্করাচার্যের আদর্শকে নিজের জীবনে অনুসরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি—রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের জীবনাদর্শই এক্ষেত্রে আমার কাছে অনেক সহজ এবং বাস্তবপন্থী বলে মনে হত। যাই হোক, শঙ্করাচার্য সম্বন্ধে বির‍ূপ সমালোচনা শুনে আমি মোটেই খুশি হতে পারলাম না। তবু যে কটা দিন কুসুমপুরে ছিলাম বেশ আনন্দেই কেটেছিল। বাবাজীদের সকলকেই আমার খুব ভালো লেগেছিল।

বারাণসীতে রামকৃষ্ণমিশন মঠে স্বামী ব্রহ্মানন্দ আমাদের সানন্দ অভ্যর্থনা জানালেন। স্বামীজী বাবাকে এবং আমাদের পরিবারের আরো অনেককেই ঘনিষ্ঠভাবে জানতেন। এখানে আমরা কয়েকদিন রইলাম। এদিকে বাড়িতে তখন হুলুস্থুল লেগে গেছে। আমার জন্য বহুদিন অপেক্ষা করে করে বাবা-মা একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। আমার কাকা দাদারাও একটা কিছু করবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন। কিন্তু কী করবেন তাঁরা? পুলিশে খবর দেওয়াটা তাঁদের মনঃপূত হল না, কারণ পুলিশ এসব ব্যাপারে সাহায্য করার চেয়ে নাজেহাল করে বেশি। শেষটায় তাঁরা এক গণৎকারের শরণাপন্ন হলেন। গণৎকার গণনা করে বললেন, আমি সুস্থ শরীরে কলকাতার দক্ষিণ-পশ্চিমে কোনো জায়গায় আছি, জায়গাটির নামের আদ্যাক্ষর ‘ব'। তৎক্ষণাৎ সাব্যস্ত হল, জায়গাটি নিশ্চয়ই বৈদ্যনাথ—বৈদ্যনাথে একজন নামকরা যোগীর আশ্রম ছিল। আমার এক কাকা তখনই ছুটলেন বৈদ্যনাথ। কিন্তু তাঁর ছোটাছুটিই সার হল, কারণ আমি তখন বসে আছি বারাণসীতে।

৮৯