পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/১০৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-ভ্ৰমণ । পশ্চিমদিকে অবস্থিত। বোম্বাইনগরের প্রাচীন ইম্ম-মন্দির ইত্যাদির মধ্যে ইহাই সর্ববাগ্রেগণ্য ; পৌরাণিক প্ৰবাদ এইরূপ যে শ্ৰীরাম চন্দ্ৰ লঙ্কাধিপতি রাবণ কর্তৃক সীতাদেবী অপহৃত হইলে পর সীতার অন্বেষণে বহির্গত হইয়া এই স্থানে এক রাত্রি অবস্থিত করিয়াছিলেন। রামচন্দ্রের শিব পূজার জন্য ভ্ৰাতৃভক্ত লক্ষণ প্রত্যহ রাত্রিতে কাশীধাম হইতে এক একটী নূতন শিবলিঙ্গ আনয়ন করিতেন। দৈবগতিকে এক দিবস লক্ষণ নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হইতে না পারায় রামচন্দ্ৰ অধৈৰ্য্য হইয়া বালুকাদ্বারা লিঙ্গ নিৰ্ম্মােণ পূর্বক পূজাৰ্চনা সম্পন্ন করেন । এই ঘটনা হইতেই এই মন্দিরের নাম বালুকেশ্বর হইয়াছে। পরে কাশীর আনীত শিবটীকে রামচন্দ্ৰ মন্দির মধ্যে স্থাপন করেন, বৰ্ত্তমান সময়ে মন্দির মধ্যে যে শিবলিঙ্গ পূজিত হন ইহা লক্ষণ কর্তৃক আনীত বারাণসীর শিবলিঙ্গ। কথিত আছে যে শ্ৰীরামচন্দ্র বালুকাদ্বারা যে শিবলিঙ্গ করিয়াছিলেন তাহা পর্তুগীজদের আগমনকালে স্লেচ্ছ দর্শনে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়া অদৃশ্য হইয়া গিয়াছেন। এখানে একটী অতি সুন্দর ক্ষুদ্রাকার পুষ্করিণী আছে। ইহার নাম বাণতীর্থ। পৌরাণিক প্ৰবাদ হইতে ইহাও মুক্ত নহে। রামচন্দ্র তৃষ্ণাৰ্ত্ত হইয়া এস্থানের চারিদিকে কোথাও জল দেখিতে না পাইয়া ভুমধ্যে বাণ নিক্ষেপ করিলেন অমনি মৃত্তিকাভেদ করিয়া সুনিৰ্ম্মল জলস্রোত উত্থিত হইয়া ভঁাহার তৃষ্ণা দূর করিল, তদবধি ইহা “বাণতীর্থ” নামে পরিচিত হইয়া আসিতেছে। এই পুকুরের চারি তীরে সোপানাবলী ও চারিধারে ঘন পত্ৰ পল্লব সমাচ্ছন্ন বিটপীরাজি ও তুষার ধবল। বহু সুন্দর সুন্দর দেব-মন্দির থাকায় ইহার সৌন্দৰ্য্য অত্যন্ত বৃদ্ধি করিয়াছে। এতদ্ব্যতীত এখানে কয়েক ঘর ব্ৰাহ্মণের সুন্দর ও পরিষ্কার গৃহাবলী ও ধৰ্ম্মশালা বিদ্যমান আছে। পুষ্করিণীর নিৰ্ম্মল সলিল মধ্যে দেব-মন্দিরের ও তরুশ্রেণীর শ্যামল ছায়া প্ৰতিফলিত হইয়া বড়ই সুন্দর দেখায়। সমুদ্র তীরস্থিত পাহাড়ের গায় একটি ছিদ্ৰ আছে, উহার ভিতর দিয়া যাইতে পারিলে, সমুদয় পাপক্ষয় হয়। ও পুনর্জন্ম হয় না বলিয়া হিন্দুধৰ্ম্মাবল (স্বগণের বিশ্বাস। জন-প্ৰবাদ হইতে জ্ঞাত হওয়া যায় যে, শিবাজী মহারাজা এই উপায়ে পুণ্য সঞ্চয় করিয়াছিলেন, কৃশাঙ্গ ব্যক্তিগণের পক্ষে এইরূপ ভাবে পুণ্য সঞ্চয় করা বিশেষ কষ্ট বালুকেশ্বর।