পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এখানে এস।” কালনাদিনী হরজটাবিহারিণী সলিলরূপিণী তরঙ্গভঙ্গিনী মূওমতা করুণ পুণ্যসলিলা ভাগীরথী যেন কল-কল্লোলে বলিতেছেন “আয়রে সবে, শীতল করিয়া দিব।” গঙ্গাবক্ষে সৌধকিরীটিনী কাশীর শ্বেত প্ৰতিবিম্ব পতিত হইয়া বড় সুন্দর দেখাইতেছিল,—চিক্‌মিক ঝিকমিক্‌-সে সৌন্দৰ্য্যছবির অতল তলে কোনও প্রগাঢ় রহস্য চিরলুক্কায়িত আছে কিনা, তাহা কে বলিতে পারে ? যিনি ডাফরিনব্রিজের উপর হইতে কাশীর অনির্বচনীয় শোভা অবলোকন করিয়াছেন, তিনিই ধন্য হইয়াছেন। পুলের অপর পারেই “কাশী’ ষ্টেসন। কাশীতে দুইটী ষ্টেসন, একটী কাশীনামে আঙাহত ; অপরটিকে ‘বেনারস কেণ্টনমেণ্ট' কহে। কেণ্টনমেণ্ট ষ্টেসনটী খুব বড় ষ্টেসন, এখানে বি, এন, ডবলিউ রেলওয়ে আসিয়া মিলিত হইয়াছে। কাশী ষ্টেসনে অবতরণ করিয়া আমরা এক্কাতে আরোহণ করিলাম। পশ্চিমাঞ্চলে এক্কাই সমধিক প্রচলিত। কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত একটীি ছোট মঞ্চের উপর চারিকোণে চারিটি দণ্ড, দণ্ডের উপরে রৌদ্রবৃষ্টি-নিবারণের নিমিত্ত একটী ক্ষুদ্র চাঁদোয়া খাটান, নিম্নে নেয় । উপর একটী গাদী, পশ্চাতে ছোট পৰ্দা ঝুলান ; এহেন অদ্ভুতাকৃতি দ্বি-চক্র- ; যানকে একটী ঘোড়ায় টানিয়া লইয়া যায়। কাশীকে বাঙ্গালীর সহর বলিলে কোনও অত্যুক্তি হয় না, এত অধিক বাঙ্গালীর বাস পশ্চিমের আর কোনও সহরেই দেখিতে পাওয়া যায় না ; যে দিকেই দৃষ্টিপাত কর, সে দিকেই বাঙ্গালী দেখিতে পাইবে, তোমার মনে হইবে না যে বাংলা দেশ হইতে অপর কোনও স্থানে উপনীত হইয়াছ। আমাদের গাড়ী ছুটিয়া চলিল, রাস্তার দুইপাশ্বে দোকানশ্রেণী, দ্বিতল ত্রিতল অট্টালিকা, কোথাও পশ্চিমদেশীয়া থ্রৌঢ়ী রমণীগণ গম পিশিতেছে আর গান গাহিতেছে, কোথাও পানবিক্রেত্রী রূপলাবণ্যবতী যুবতী রমণী কাজল-অঙ্কিত চক্ষের নিপুণ কটাক্ষে কোনও যুবক পানক্রেতার মাথা ঘুরাইয়া দিতেছে! মন্দিরে মন্দিরে ছত্ৰে ছত্ৰে কাশীধাম সুশোভিত। যথা সময়ে বাসায় পহুছিয়া শ্ৰান্তি দূর করিলাম। নিদ্রার অভাবে ক্লান্ত শরীর অত্যন্ত অবসাদগ্ৰস্ত বোধ হইতেছিল, বিশ্রামাদির পরে আহারান্তে শয্যায় ঢলিয়া পড়িবামা কাশী ।