পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিরি-গোবৰ্দ্ধন আমরা শু্যামকুণ্ড তীরে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। শ্যামকুণ্ড ও রাধাকুণ্ড छ्शै পাশাপাশি যুগ্মকুণ্ড । মধ্যস্থানে ৫।৬ হাত চওড়া একটী পাথরের বঁধে আছে। বঁধের নীচে দিয়া উভয় কুণ্ডের জলে সংযোগ আছে। কুণ্ড দুইটিই চারিদিকে পাথরের সিড়ি দিয়া বঁধান। এখানকার অধিকারী পাণ্ড অর্থাৎ কুণ্ডবাসী ব্ৰজবাসীদল বৃন্দাবনের দল হইতে ভিন্ন,- অর্থাৎ একদল অপর দলের অধিকারে হস্তার্পণ করে না। স্বৰ্গীয় কায়স্থ-কুলতিলক মহাত্মা কৃষ্ণচন্দ্ৰ সিংহ অর্থাৎ লালাবাবু স্বব্যয়ে এই কুণ্ড দুইটি বাঁধাইয়া দিয়া কীৰ্ত্তি ও পুণ্যসঞ্চয় করিয়া গিয়াছেন। শ্যামকুণ্ডের জল - নীলাভ এবং রাধাকুণ্ডের জল বর্ণহীন স্বচ্ছ । গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম-রেখায় যমুনা ও গঙ্গার জলে যে ভাবে মেশামিশি হইতে দেখিয়াছি, এখানেও সেই ভাবে মেশামিশি দেখিলাম। এই মেশামিশি দেখিয়া বাঙ্গালী বৈষ্ণব কবির কৃষ্ণ-অঙ্গে রাই-অঙ্গ মেশামিশির ললিত-মধুর পদাবলীগুলি মনে পড়িতে লাগিল। প্ৰাকৃতির লীলাই যে ভগবানের লীলার সাক্ষাৎ সাক্ষীস্বরূপ তাহাই দেখাইয়া দেওয়াই হিন্দুর তীর্থস্থান গুলির উদ্দেশ্য, আর সে উদ্দেশ্য বিশেষ-ভাবে ব্ৰজমণ্ডলের প্রতিগ্রামে, প্ৰতিবনে, প্রতিদৃশ্যে, পরিস্ফুট। যাত্রীরা এই উভয় কুণ্ডে স্নান, তৰ্পণ, দান করিয়া থাকেন। শ্যামকুণ্ডের তীরে একটী পবিত্ৰ স্থান আছে, এটি একটী গুহার ন্যায়। স্থানটী বাঙ্গালী বৈষ্ণবের নিকট যেমন আদরের, বাঙ্গালী সাহিত্যিকের নিকটেও তেমনি আদরের,—এই গুহাটিতে কবিরাজ কৃষ্ণদাস গোস্বামী জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাইয়াছিলেন এবং এই গুহাই বাঙ্গালীর মহাগ্ৰন্থ বৈষ্ণবের গ্ৰন্থরাজ শ্ৰীশ্ৰীচৈতন্যচরিতামৃতের জন্মভূমি। এই উভয় কুণ্ডের নিকটে আর একটা কুণ্ড আছে, সেটিও বাঁধান এবং সেটি শ্ৰীমতী রাধার অভিন্ন-হৃদয়া সখি ললিতার নামে প্ৰসিদ্ধ-ললিতাকুণ্ড । ললিতাকুণ্ডের জল অপেক্ষাকৃত শ্বেতবর্ণ।বশিষ্ট। ইহারই নিকটে শ্যামকুণ্ড রাধাকুণ্ড দর্শন করিয়া আমরা অগ্রসর হইলাম। আমাদের পাণ্ডা। আমাদিগকে রাঘব গোস্বামীর পাট দেখাইলেন। ইনি দাক্ষিণাত্যবাসী ব্ৰাহ্মণ ছিলেন। চৈতন্যমহাপ্রভুর সম্প্রদায়ভুক্ত হইয়া শেষ-জীবনে গোবৰ্দ্ধনে আসিয়া বাস করেন। শ্ৰীনিবাসাচাৰ্য্য ও নরোত্তম ঠাকুর যখন বৃন্দাবনে আসেন, তখন ইনিই ৩০৭ :