পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারত-ভ্ৰমণ । ও মুমুয়ূর্ণ নরনারীদিগকে হত্যাকারিগণ নিক্ষেপ করিয়াছিল, এখন সেই কুপের উপরে একটী স্তম্ভ প্ৰস্তুত হইয়াছে এবং তাহার চতুর্দিক প্রাচীর দিয়া ঘিরিয়া দেওয়া হইয়াছে। তাঁহারই পার্শ্বে একটী সমুন্নত বৃত্তাকার বেদীর উপরিভাগে শ্বেতপ্ৰস্তরনিৰ্ম্মিত পক্ষবিশিষ্ট ইউরোপীয় কল্পনার এক স্বৰ্গবিদ্যাধরীর মূৰ্ত্তি স্থাপিত হইয়াছে। এই রমণীমূৰ্ত্তি দুই পক্ষ বিস্তার করিয়া শোকভারে, কারুণ্যপূর্ণ নতনেত্ৰে চাহিয়া আছে, হস্ত দুইটী বক্ষের উপর রক্ষিত। মূৰ্ত্তিটির সর্বাঙ্গে ভাবে ও ভঙ্গিমায় শোক ও করুণা উছলিয়া পড়িতেছে ! চতুর্দিকে উচ্চ প্রস্তরের রেলিঙের অভ্যন্তরে মূৰ্ত্তিটি রক্ষিত হইয়াছে। মূৰ্ত্তিটি দর্শনমাত্র দর্শকের হৃদয়ও শোকে ও সমবেদনায় করুণা ও ব্যথায় ভরিয়া উঠে। স্তম্ভের পাদদেশে উভয় পার্শ্বে বিদ্রোহকালে নিহত ইংরেজগণের সমাধিগুলি বিদ্যমান। নানাবিধ সুন্দর-সুন্দর লতা ও ফুল সমাধি-গাত্র বেড়িয়া রহিয়াছে। স্তম্ভগাত্রে ইংরাজীতে খোদিত আছে “বিস্তরের বিদ্রোহী নানা ধুন্দুপন্থের দল ১৮৫৭ খ্ৰীষ্টাব্দের মেমরিয়েল / ১৫ই জুলাই তারিখে এই স্থানের বহু ইউরোপীয়কে ওয়েল । বিশেষতঃ ইউরোপীয় স্ত্রীলোক ও শিশুকে অন্যায় রূপে বধ করিয়া এই কুপের মধ্যে নিক্ষেপ করিয়াছিল।” এই শোক নিদর্শন ব্যতীত ফুলের চৌকায়, লতাকুঞ্জে সুশোভিত উদ্যানের অপরাংশ বড় মনোরম ৷ বেড়াইবার কঙ্করময় সুবিন্যস্ত পথগুলি বড় গ্ৰীতিপ্ৰদ। গভৰ্মেণ্ট অতি যত্নে এই সুন্দর উদ্যান রক্ষা করেন। রক্ষণাবেক্ষণের ভার এক জন ইংরাজ উদ্যান-রক্ষকের উপর আছে। তাহার অধীনে একদল ইংরেজ প্রহরী ও আছে। উদ্যানের সৌন্দৰ্য্য-রক্ষণার্থ গভমেণ্টের বার্ষিক ৫০ ০০ পাঁচ সহস্ৰ মুদ্রা ব্যয় হয়। স্তম্ভ ও করুণাময়ী-মূৰ্ত্তিটি ব্যতীত এই উদ্যানের ঠিক মধ্যস্থলে একটা গির্জাও আছে। বাগানে বেড়াইয়া হৃদয়ে একটা বিষাদের ছায়া লইয়া মেমোরিয়াল গির্জা দেখিবার জন্য উহার ভিতরে গেলাম। গিৰ্জাটি কারুকাৰ্য্য খচিত। উহার উচ্চ চুড়া সহরের মধ্যে বহুদূর হইতে দেখা যায়। উহার প্রাচীর গাত্ৰে কত শোক-লিপি—মাতা-পিতা পুত্রের জন্য— পতি স্ত্রীর জন্য-স্ত্রী স্বামীর নিমিত্ত হৃদয়ের শোক-নিঃসৃত তপ্ত-শোণিতদ্বারা এই স্মারক-লিপিগুলি লেখাইয়া, শান্তিলাভ করিয়াছেন ;-প্ৰথম দিন v98