পাতা:ভারত ভ্রমণ - তারিনীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী .pdf/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কানারক “জগন্নাথদেবের মন্দিরের নিকট সূৰ্য্যদেবের মন্দির অবস্থিত। এই মন্দিরটি প্ৰস্তুত করিতে ওড়িষ্যা রাজের দ্বাদশ বৎসরের রাজস্ব ব্যয়িত হইয়াছিল । এরূপ অত্যুত্তম শিল্পকাৰ্য্য সমন্বিত মন্দির অতি অল্পই দেখিতে পাওয়া যায় এমন লোক অতি বিরল যিনি এই বিরাট কীৰ্ত্তি দর্শনে বিস্মিত না হইবেন। ইহার চতুর্দিকস্থ প্রাচীর ১৫০ হাত উচ্চ ও উনিশ হাত চওড়া প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। সিংহদ্বারের সম্মুখে ৫০ পঞ্চাশ হাত উচ্চ একটা কৃষ্ণ প্রস্তর নিৰ্ম্মিত স্তম্ভ আছে। এই স্তম্ভে নানা প্রকার খােদিত মূৰ্ত্তি আছে; ইহার নয়। ধাপ উপরে উঠিলে প্রস্তরের উপর খোদিত সূৰ্য্য ও নক্ষত্র মণ্ডলের চিত্ৰ দেখিতে পাওয়া যায় । মন্দিরের চতুৰ্দিকস্থ গাত্রে নানাজাতীয় উপাসক শ্রেণীর মূৰ্ত্তি আছে- কেহ উপবিষ্ট, কেহ মাথায় হাত দিয়া। দণ্ডায়মান, কেহ ক্ৰন্দনপরায়ণ, কেত হাসিতেছে, কেহ সচেতন, কেহ। অচেতন, কেহ সঙ্গীতে মন্ত, কেহ নৃত্যে নিযুক্ত, কত প্ৰকার যে বিভিন্ন শ্রেণীর জীব জন্তু তাহা কল্পনাতীত । এই সুবৃহৎ মন্দিরের নিকট আরও ২৮টি মন্দির আছে । জন সাধারণে বলে যে প্রতি মন্দিরেই নানারূপ আনৈসৰ্গিক ব্যাপার ঘটিয়া থাকে । কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে এই স্থানে কবির মা ওহেদের সমাধি হইয়াছিল । অদ্যাবধি তাহার সম্পর্কে নানাপ্রকার গল্প শুনিতে পাওয়া যায়। তাহার সুগভীর জ্ঞান ও ধৰ্ম্মশীলতার জন্য হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই তাহাকে শ্রদ্ধা করিত । এই মহাত্মার দেহাবসানে হিন্দুগণ তাহার দেহ ভস্মীভূত করিতে চাহে ও মুসলমানবৃন্দ তাহা কবরস্থ করিতে ইচ্ছা করে, কিন্তু আশ্চয্যের বিষয় এই যে আবরণ বস্ত্ৰ উদঘাটন করিয়া দেখে যে তাহার নীচে মৃতদেহ নাই ।” তিন শত বৎসর পূর্বে আইন-ই আকবরীতে কনারিক সম্বন্ধে যাহা লিখিত হইয়াছে বৰ্ত্তমান সময়ে তাহার কিছুই দেখিলাম না । জানিনা কোন যাদুমন্ত্র বলে এই অপূৰ্ণ কারুকার্যা সম্পন্ন মন্দির সমূহ এত শীঘ্ৰ ধ্বংসের পথে অগ্রসর হইল ! এখন সকলই লুপ্ত হইয়াছে কেবল মূলমন্দিরটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয় নাই । শ্যামল তৃণাচ্ছাদিত ময়দানের মধ্যবৰ্ত্তী গ্ৰাম্য পথে অগ্রসর হইতে হইতে যখন দূর হইতে এই ভগ্নস্তুপ আমাদের প্রথম দৃষ্টিপথে পতিত হইল, তখন নৈরাশ্যের একটা কালো ছায়া আমাদের হৃদয়