ভগবান মনুষ্যরূপ ধারণ করিয়া যে সময় ঐ স্থান দিয়া পুরী গমন করিতেছিলেন, সেই সময় তিনিই ঐ স্থানে দাঁতন করিয়া হস্তমুখাদি প্রক্ষালন করেন বলিয়া, ঐ স্থানকে দাতন কহে। কিন্তু প্রায় ২৫০ বৎসর পূর্ব্বে যদুনন্দন যে দাঁতনের ইতিহাস লিখিয়া গিয়াছেন, তাহা পাঠ করিলে স্পষ্টই জানিতে পারা যাইবে যে, চৈতন্যদেবের বহুপূর্ব্ব হইতেই এই দাঁতন নাম বিদ্যমান আছে।
এই স্থানে দুইটী বৃহৎ পুষ্করিণী আছে। উহার একটীর নাম বিদ্যাধর, ও অপরটীর নাম শশাঙ্ক। বিদ্যাধরের প্রায় ১২০০ ফিট লম্বা ১০০০ ফিট প্রস্থ জলকর। উহার জল অতি গভীর ও নির্ম্মল। উহার ঠিক মধ্যস্থলে জলের মধ্যে একটী দেবমন্দির প্রতিষ্ঠিত আছে। গ্রীষ্মকালে জল কমিয়া গেলে এখনও পর্য্যন্ত ঐ মন্দিরের চূড়া দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। কথিত আছে, রাজা তেলিঙ্গা মুকুন্দদেবের মন্ত্রী বিদ্যাধর কর্ত্তৃক এই পুষ্করিণী খোদিত হইয়াছিল।
শশাঙ্ক নামক পুষ্করিণী অতিশয় বৃহৎ, উহার জলকরের পরিমাণ দৈর্ঘে ৫০০০ ফিট, ও প্রস্তে ২৫০০ ফিট। রাজা শশাঙ্কদের জগন্নাথগমনকালীন এই পুষ্করিণী খোদিত করিয়াছিলেন। এরূপ কথিত আছে যে, উভয় পুষ্করিণী প্রস্তর নির্ম্মিত ৭॥ ফিট উচ্চ ও ৪॥ ফিট প্রস্থ একটী সুড়ঙ্গ দ্বারা সংযোজিত ও উভয় পুষ্করণীর জলের উচ্চতা একরূপই দেখিতে পাওয়া যায়।
আমি দাঁতন গ্রামে অবস্থিতি করিতে লাগিলাম, এই স্থানে আমাকে অষ্টাহকাল বাস করিতে হইল। বলা বাহুল্য, আমি দাঁতনথানাতেই অবস্থিতি করিয়া সেই স্থানের ভারপ্রাপ্ত কর্ম্মচারীর সাহায্যে গোপনে অনুসন্ধান করিতে লাগিলাম।