পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
১১

জজ সাহেবের বাড়ীতে ডাকাইত পড়িয়াছে। যদি সে কোনরূপে সাহায্য করতে পারে, এই ভাবিয়া, সে সেই দিকে আসিতে থাকে, পথে দেখিতে পায়, ডাকাইতগণ ডাকাতি করিয়া সেই দিকেই ফিরিয়া আসিতেছে। সে একাকী, সুতরাং কোনরূপ উহাদিগের প্রতিবন্ধক না হইয়া লুক্কাইত ভাবে রাস্তার একপার্শ্বে দণ্ডায়মান হয়। দস্যুগণ তাহাকে অতিক্রম করিয়া গমন করিবার পর সেও দুর হইতে তাহাদিগের পশ্চাৎ পশ্চাৎ গমন করে, কিন্তু কিছুদূর গমন করিবার পরই উহারা তাহার দৃষ্টিপথের অতীত হইয়া চলিয়া যায়।

 ঐ চৌকিদার আরও বলিয়াছিল যে, সে হানিফ খাঁকে উত্তমরূপে চিনে। সে তাহাকে ঐ দলের সঙ্গে দেখিয়াছিল। ডাকাইতের দল দেখিয়া তাহার যত ভয় না হয়, ভূত দেখিয়া তাহার অতিশয় ভয় হয়, কারণ সে শুনিয়াছিল, হানিফ খাঁ মরিয়া ভূত হইয়াছে। ভূত দেখিয়া ও ভূতের ভয়ে অতিশয় ভীত হইয়াছিল বলিয়াই, সে সেই দলের সম্পূর্ণরূপ অনুসরণ করিতে পারে নাই। সে আরও বলিয়াছিল, ঐ ভূতের দল একটী বাঁশবাগানের নিকট গমন করিবার পর কোথায় মিশিয়া গেল, আর সে তাহাদিগকে দেখিতে পায় নাই। তাহার বিশ্বাস, ঐ দলের সকলেই ভূত, উহারা বাঁশ-বাগানের ভিতর গিয়াই অন্তর্ধান হয়।



চতুর্থ পরিচ্ছেদ।

 জজ সাহেবের বাড়ীতে ডাকাতির অনুসন্ধানের নিমিত্ত পুলিসের সর্ব্বপ্রধান কর্ম্মচারী হইতে সর্ব্বনিম্ন কর্ম্মচারী পর্য্যন্ত সকলেই বিশেষরূপে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তাঁহাদিগের মধ্যে সকলেই হানিফ খাঁর দ্বারা যে ডাকাতি হইয়াছে, এ কথা বিশ্বাস করুন বা না করুন, কিম্বা ভূতের কথা বিশ্বাস করুন বা না করুন, জজ সাহেবের বাড়ীতে যে ডাকাতি হইয়াছে ও তাঁহার বাড়ী হইতে যে অনেক দ্রব্য অপহৃত হইয়াছে, ইহা কিন্তু সকলকেই বিশ্বাস করিতে হইল। আরও বিশ্বাস করিতে হইল যে, ঐ কার্য্য ডাকাতের দ্বারা সম্পন্ন হইয়াছে। সেই সকল ডাকাত যাহারাই হউক না কেন, তাহারা কিন্তু ভূত নহে, কারণ উহারা যদি ভূত হইত, তাহা হইলে কেবলমাত্র উৎপাত করিয়াই চলিয়া যাইত। চেন, ঘড়ী, আংটী, রূপার বাসন, কাপড় চোপড় প্রভৃতি দ্রব্যাদি ভূতে অপহরণ করিবে কেন? ঐ সকল দ্রব্যে ভূতের প্রয়োজন কি?

 এই ডাকাতির কিনারা করিবার নিমিত্ত পুলিস কর্ম্মচারীগণ বিধিমতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। দুইজন প্রসিদ্ধ ডিটেকটিভ্ কর্ম্মচারী তাঁহাদিগের সকল কার্য্য পরিত্যাগ করিয়া এই ডাকাতির অনুসন্ধানে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। কিন্তু সহজে কিছুই করিয়া উঠিতে পারিলেন না, বা শীঘ্র যে তাহার