পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
ভূতের বিচার।

একটা কিনারা হইবে, তাহারও কোন উপায় দেখিতে পাওয়া গেল না।

 এইরূপে ক্রমে দিন অতিবাহিত হইতে লাগিল। একদিবস বেলা আন্দাজ দশটার সময় ডিটেকটিভ কর্ম্মচারীদ্বয়, থানায় দারোগার নিকট বসিয়া এই ডাকাতি সম্বন্ধে কথা-বার্ত্তায় নিযুক্ত আছেন, এরূপ সময় একজন চৌকিদার একটী স্ত্রীলোককে লইয়া সেই স্থানে উপস্থিত হইল। তাহাকে দেখিয়া দারোগা বাবু সেই চৌকিদারকে কহিলেন, “এই স্ত্রীলোকটীর কি হইয়াছে?”

 চৌকিদার। এই স্ত্রীলোকটী কোন বিষয় আপনাকে জানাইতে ইচ্ছা করেন, তাই আমি ইহাকে সঙ্গে করিয়া আনিয়াছি।

 দারোগা। কি বিষয় জানাইতে ইচ্ছা করে?

 চৌ। উহাকে জিজ্ঞাসা করিলেই সমস্ত বিষয় জানিতে পারিবেন।

 দা। কি গো বাছা, কি হইয়াছে?

 স্ত্রী। আমরা আর ঘরে সুস্থ হইয়া বাস করিতে পারি না।

 দা। কেন?

 স্ত্রী। ভূতের অত্যাচারে।

 দা। ভূতের অত্যাচার আমরা কিরূপে নিবারণ করিব? আমরা তো ভূতের ওঝা নহি। কি হইয়াছে বল দেখি শুনি?

 স্ত্রী। গত রাতে আমি আমার ঘরে শুইয়াছিলাম, বাহির হইতে কে আমার দরজায় ধাক্কা দিল; আমি প্রদীপ হস্তে দরজা খুলিয়া দেখি, আমার ঘরের সম্মুখে সেই ভূত দাঁড়াইয়া। ঐ ভূত দেখিয়াই আমি একেবারে অজ্ঞান হইয়া সেই স্থানে পড়িয়া গেলাম, আমার মুখ দিয়া কোন কথা বাহির হইল না। আমি কতক্ষণ ঐরূপ হতজ্ঞান অবস্থায় সেই স্থানে পড়িয়াছিলাম, তাহা আমি জানি না। যখন আমার জ্ঞান হইল, তখন দেখলাম, আমার অঙ্গে যে সকল অলঙ্কার ছিল, তাহা নাই। ঘরের ভিতর আমার যে সকল বাক্স পেটরা ছিল, তাহা সমস্তই ভাঙ্গা অবস্থায় পতিত রহিয়াছে, ও তাহার মধ্যে আমার যাহা কিছু ছিল তাহার সমস্তই অপহৃত হইয়াছে। আমার বিশ্বাস, ঐ ভূত ভিন্ন অপর কেহ আমার ঐ সকল দ্রব্য অপহরণ করে নাই। আমার সমস্ত দ্রব্য যখন ভূতে লইয়া গিয়াছে, তখন আমার ঘাড়টী যে সে মটকাইয়া রাখিয়া যায় নাই, ইহাই আশ্চর্য্য!

 দা। তুমি বলিতেছ, “সেই ভূত”! কোন্ ভূত?

 স্ত্রী। তাহা তো আপনারা সকলেই জানেন। যে ভূত কোটাল বৌর ঘাড়-মটকাইয়া রাখিয়া গিয়াছিল; যে ভূত রাস্তার উপর বাঁশ ফেলিয়া সকলের যাতায়াত সময় সময় বন্ধ করিয়া দেয়; যে ভূত গাছের উপর পা ঝুলাইয়া বসিয়া থাকিয়া সকলকে ভয় দেখাইয়া থাকে, ও সেই ভূত, সকলেই উহাকে চিনে।