পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ।
১৩

 দা। উহার নাম কি?

 স্ত্রী। হানিফ খাঁ মরিয়া ভূত হইয়াছে, তাহা তো আপনারা সকলেই জানেন। ও সেই ভূত।

 দা। সে ভূত থাকে কোথায়?

 স্ত্রী। ভূত যে কোথায় থাকে তাহা কে জানে, কিন্তু প্রায়ই তো তাহাকে কেহ না কেহ দেখিতে পায়।

 দা। কোথায় ভূতকে দেখিতে পাওয়া যায়?

 স্ত্রী। আমাদের গ্রামে ও তাহার নিকটবর্ত্তী স্থান সমূহে—মাঠের ভিতর, জঙ্গলের ভিতর, বাগানের ভিতর, পুকুরের ধারে প্রভৃতি যে সকল স্থানে লোকের যাতায়াত কম, প্রায় সেই সকল স্থানে কেহ না কেহ ঐ ভূতকে দেখিতে পায়, ইহা তো প্রায়ই শুনিতে পাওয়া যায়।

 দা। তুমি ঐ ভূতকে আমাদিগকে দেখাইতে পার?

 স্ত্রী। আমি স্ত্রীলোক, আমি কিরূপে ঐ ভূত আপনাদিগকে দেখাইব; আপনারা চেষ্টা করিলেই, ঐ সকল স্থানে কোন দিন না কোন দিন ভূতকে দেখিতে পাইবেন। কিন্তু সে যদি আপনাদিগের ঘাড় মট্‌কাইয়া দেয়?

 ঐ স্ত্রীলোকের কথা শুনিয়া পুলিস-কর্ম্মচারীত্রয় ভূতের ব্যাপার বিশেষ কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিলেন না, তবে এই মাত্র বুঝিলেন যে, যে চোর তাহার বাড়ীতে চুরি করিতে আসিয়াছিল, তাহাকে দেখিয়া ঐ স্ত্রীলোকটী অতিশয় ভয় পাইয়া অজ্ঞান হইয়া পড়ে। এই সুযোগে ঐ চোর ইহার যথাসর্ব্বস্ব অপহরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে।

 স্ত্রীলোকটীর কথা শুনিয়া দারোগা বাবু সেই চৌকিদারকে কহিলেন, এই স্ত্রীলোকটী যেরূপ ভূতের কথা বলিতেছে, তাহা তুমি শুনিয়াছি কি?

 চৌ। হাঁ হুজুর, শুনিয়াছি।

 দা। এ কি সত্য কথা কহিতেছে?

 চৌ। হাঁ হুজুর, এ সব সত্য কথা কহিতেছে। আমার মহলে হানিফ খাঁ ভূত হইয়া অজ-কাল বড়ই অত্যাচার করিতেছে।

 দা। তুমি কি সেই ভূত কোন দিন দেখিয়াছ?

 চৌ। না, আমি নিজে একদিনও দেখি নাই। কিন্তু যাহারা যাহারা দেখিয়াছে, তাহাদেরই মুখে শুনিয়াছি। অনেকেই ভয় পাইয়াছে, এ কথা আপনি সেই স্থানে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেই জানিতে পারিবেন।

 চৌকিদারের কথা শুনিয়া ডিটেকটিভ কর্ম্মচারীদ্বয়ের মধ্যে একজন কহিলেন, হানিফ খাঁ ভূত হইয়া যখন ঐ সকল স্থানে নানারূপ অত্যাচার করিতেছে, এ কথা যখন ঐ স্থানের স্থানীয় লোকদিগের বিশ্বাস, তখন একবার ঐ স্থানে গিয়া একটু অনুসন্ধান করিয়া দেখা মন্দ নহে।