পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪
ভূতের বিচার।

 ইহাঁর কথায় সকলেই অনুমোদন করিলেন। দারোগাবাবু ঐ স্ত্রীলোকটীর এজাহার লিখিয়া লইয়া তাহাকে কহিলেন, “তুমি এখন ঘরে যাও, আমি একটি ভূতের ওঝার জোগাড় করিয়া তোমাদিগের বাড়ীতে যত শীঘ্র পারি গিয়া উপস্থিত হইব ও দেখিব, তোমার যে সকল দ্রব্য চুরি গিয়াছে, তাহার কোনরূপ সন্ধান করিয়া উঠিতে পারি কি না এবং যে ভূত তোমাদিগের গ্রামের লোকের উপর অত্যাচার করিতেছে, সেই ভূতকে ঐ গ্রাম হইতে তাড়াইতে পারি কি না?

 দারোগা বাবুর কথা শুনিয়া চৌকিদার ঐ স্ত্রীলোকটীকে সঙ্গে লইয়া সেইস্থান হইতে প্রস্থান করিল।

 উহারা প্রস্থান করিবার পর দারোগাবাবু আহারাদি সমাপন করিয়া সেই স্থানে গমন করিবার নিমিত্ত প্রস্তুত হইলেন। বলা বাহুল্য, ডিটেকটিভ কর্ম্মচারীদ্বয়ও তাঁহার সহিত সেই স্থানে গমন করিবার নিমিত্ত প্রস্তুত হইয়া আসিলেন।



পঞ্চম পরিচ্ছেদ।

 ডিটেকটিভ কর্ম্মচারীদ্বয়ের সহিত দারোগা বাবু সময়-মত সেই গ্রামে গিয়া উপস্থিত হইলেন। ঐ স্ত্রীলোকটীর বাড়ীতে গিয়া দেখিলেন, তাহার ঘর হইতে প্রকৃতই সিন্দুক, বাক্স ভাঙ্গিয়া দ্রব্যাদি কে চুরি করিয়াছে। আরও জানিতে পারিলেন, যে সকল গহনা ঐ স্ত্রীলোকটীর অঙ্গ হইতে অপহৃত হইয়াছে বলিয়া সে এজাহার দিয়াছে, সেই সকল অলঙ্কার সদা সর্ব্বদাই সে পরিধান করিত, এখন তাহার গাত্রে সেই সকল অলঙ্কার নাই।

 এই সমস্ত বিষয় অবগত হইয়া ভূতের প্রকৃত ব্যাপারটা কি তাহা জানিবার নিমিত্ত তিনি সেই গ্রামের ও নিকটবর্ত্তী স্থানের অনেক লোককে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করিলেন। তাঁহার কথার উত্তরে অনেকেই ভূতের অত্যাচারের কথা বলিল। কেহ বলিল, সে একদিন বাঁশ-বাগানের ভিতর একঝাড় বাঁশের গোড়ায় ভূতকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছে। কেহ বলিল, একদিন সন্ধ্যার পর রাস্তা দিয়া গমন করিবার কালীন দেখিতে পায় যে, ভূতটী একটী গাছের উপর পা ঝুলাইয়া বসিয়া আছে। তাহাকে দেখিয়া যেমন ঐ ভূত সেই গাছ হইতে লাফ দিয়া তাহার ঘাড়ে পড়িবে, অমনি সে দৌড়াইয়া সেই স্থান হইতে পলায়ন করে। এইরূপ অনেকে ঐ ভূত সম্বন্ধে অনেক কথা কহিল। কেহ বা কহিল, সে ভাল করিয়া দেখিয়াছে যে, উহার আকৃতি হানিফ খাঁর মত, কিন্তু লম্বা লম্বা হস্ত, লম্বা লম্বা অঙ্গুলি, লম্বা লম্বা পা বাড়াইয়া চলে।

 উহাদিগের নিকট এই সকল বিষয় অবগত হইয়া, ঐ মকর্দ্দমার অনুসন্ধান উপলক্ষে দারোগা বাবু সেই ডিটেকটিভ কর্ম্মচারীদ্বয়ের সহিত সেই স্থানে প্রায় দশ পনের দিবস অব-