পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
নবম পরিচ্ছেদ।
২৭

চাহিলেন না যে, ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত হানিফ খাঁ। তাঁহাদিগের মধ্যে অনেকেই কহিলেন, যে ব্যক্তি মরিয়া গিয়াছে, সে আবার বাঁচিয়া আসিবে কিরূপে? এ প্রকৃত হানিফ খাঁ নহে, সে মরিয়া ভূত হইয়াছে, এ সেই ভূত।



নবম পরিচ্ছেদ।

 ভূত ধরা পড়িয়াছে, এই কথা চারিদিকে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল। ভূত দেখিবার মানসে নানা স্থান হইতে নানা লোক আসিয়া সেই স্থানে উপস্থিত হইতে লাগিল। কেহ বা সাহসে ভর করিয়া উহার নিকটে গিয়া উহাকে দর্শন করিল, কেহ বা দূর হইতে উঁকি মারিয়া দেখিল। কাহারও সে সাহসও হইল না, অপরে যাহা দেখিয়াছে, তাহাই শুনিয়া সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিল।

 হানিফ খাঁর সহিত অপর যে তিন ব্যক্তি ধরা পড়িয়াছিল, তাহারা পরিশেষে আত্ম-পরিচয় প্রদান করিল। তাহারা কে, কোথায় তাহাদিগের বাড়ী, তাহাও বলিল। ডাকাইতি করিয়াই যে তাহারা জীবনধারণ করে, তাহাও তাহারা স্বীকার করিল, এবং যে যে স্থানে তাহারা ডকাইতি করিয়াছে, তাহাও বলিয়া দিল। আরও কহিল, তাহারা তিন জনেই সর্দ্দার হানিফ খাঁর প্রিয় শিষ্য, সেই জন্য তাহারা প্রায়ই হানিফ খাঁর নিকট অবস্থান করিয়া থাকে।

 ঐ স্ত্রীলোকটী যে কে, সে কথাও প্রকাশ হইয়া পড়িল। সে বহুদিবস হইতে হানিফ খাঁর আশ্রিত। হানিফ খাঁও তাহাকে প্রণের সহিত ভালবাসে, যেখানে যায়, সেই স্থানেই তাহাকে সঙ্গে লইয়া যায়। সেই জন্যই এই নির্জ্জন বাসেও সে হানিফ খাঁর সহচরী।

 হানিফ খাঁ প্রথম প্রথম তাহার নিজের পরিচয় গোপন করিবার চেষ্টা করিয়াছিল, কিন্তু পরিশেষে যখন সে দেখিল যে, তাহার সমস্ত কথা ক্রমে প্রকাশ হইয়া পড়িতেছে, তখন সমস্তই স্বীকার করিল। স্বীকার করিল, তাহারই নাম হানিফ খাঁ, সেই পূর্ব্বে ধৃত হইয়া ফাঁসির হুকুম প্রাপ্ত হয়।

 সর্ব্ব সমক্ষেই তাহাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলান হইয়াছিল, কিন্তু যে জল্লাদ তাহার গলায় দড়ি পড়াইয়া দেয়, সে তাহার দলভুক্ত একজন ডাকাইত ছিল, সে ঐ দড়িতে এরূপভাবে একটী গাঁট দিয়া রাখিয়াছিল যে, গলায় দড়ি দিয়া সজোরে উচ্চ হইতে পতিত হইলেও ঐ দড়ির ফাঁস গলায় আঁটিয়া যায় নাই। যে সময় সে ফাঁসি মঞ্চের উপর হইতে ঝুলিয়া পড়ে, সেই সময় জল্লাদ ঐ মঞ্চের ভিতরেই দাঁড়াইয়া ছিল, পড়িবার সময় সে নিচে হইতে উহাকে ধরে, তাই গলায় ফাঁস আঁটিয়া যায় নাই বা বিশেষরূপ সে আঘাত প্রাপ্ত হয় নাই; কেবল কিছুক্ষণ ঝুলিয়া থাকে মাত্র। অল্পক্ষণ পরে সুযোগ মত ঐ জল্লাদ তাহাকে ঐ রজ্জুর ফাঁস হইতে নামাইয়া, নিজের ঘরে