পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/২৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৮
ভূতের বিচার।

লুকাইয়া রাখে, রাত্রিকালে কোন গতিকে জেলের ভিতর হইতে বাহির করিয়া দেয়। এইরূপে সে যাত্রা সেই জল্লাদ তাহার জীবন রক্ষা করে। সে মরে নাই বা ভূতও হয় নাই, তবে লোকদিগকে ভয় দেখাইবার নিমিত্ত সে ভূত সাজিয়া বেড়াইত, এই জন্যই লোকে জানিত যে, হানিফ খাঁ মরিয়া ভূত হইয়াছে; সুতরাং কেহই তাহার নিকটে আসিতে সাহস করিত না।

 এই সমস্ত বিষয় অবগত হইবার পর হানিফ খাঁর পুনরায় বিচার হইল। তথায় ভূতের বিষয় দেখিবার নিমিত্ত অনেক লোকের আগমন হইল। যে জজসাহেব পূর্ব্বে হানিফ খাঁর বিচার করিয়াছিলেন, এবারও তিনি সেই ভূতের বিচার আরম্ভ করিলেন। বিচারকালে কেবল এইরূপ সাক্ষ্য গৃহীত হইল যে, এই ব্যক্তিই হানিফ খাঁ, ইহারই প্রতি পূর্ব্বে চরমদণ্ডের আদেশ হয়। এই সমস্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়া জজসাহেব এই আদেশ প্রদান করেন যে, পূর্ব্ব মকর্দ্দমার বিচারে উহার প্রতি যে দণ্ডের হুকুম হইয়াছিল, সেই দণ্ডই বলবতী থাকিবে, ফাঁসি কাঠে ঝুলাইয়া উহাকে এ জগত হইতে পর-জগতে প্রেরণ করা হইরে।

 কাঠরার ভিতর হইতে বাহির করিয়া লইবার সময় জজসাহেব হানিফ খাঁকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, আমি তোমাকে একটী কথা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি।

 উত্তরে হানিফ খাঁ কহিল, আমি কেন আপনার বাড়ীতে ডাকাইতি করিয়াছিলাম, তাহাই জানিতে চাহেন কি?

 জজসাহেব কহিলেন,—হাঁ।

 হানিফ খাঁ কহিল, আপনি বিচারকালে আপনার পূর্ণ ক্ষমতার পরিচয় প্রদান করিয়াছিলেন, তাই আমিও আমার পূর্ণ ক্ষমতার পরিচয় প্রদান করিতে আপনার বাড়ীতে গমন করিয়াছিলাম, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে কৃতকার্য্য হইতে না পারিয়া পাথেয় স্বরূপ যাহা কিছু পাইয়াছিলাম, তাহাই লইয়া প্রত্যাগমন করি।

 জজ সাহেব শুনিয়া হাসিলেন।

 তাহার দলের অপরাপর যে সকল ডাকাইত ধৃত হইয়াছিল, বিচারে তাহারা যথোপযুক্ত দণ্ড প্রাপ্ত হয়।

 হানিফ খাঁর ফাঁসি হইবে, এবার দেশীয় জল্লাদকে বিশ্বাস না করিয়া ইংরাজ জল্লাদের দ্বারা জেলার সর্ব্বপ্রধান কর্ম্মচারীর সম্মুখে ঐ কার্য্য সম্পন্ন করা হয়।

 সেই সময় হইতে ঐ প্রদেশে কিছুদিন আর ডাকাইতির কথা শুনিতে পাওয়া যায় নাই।

সমাপ্ত।