পাতা:ভূতের বিচার - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ভূতের বিচার।

র্দ্দমার বিচার করেন। বিচারক জজ সেই সময় একজন এদেশীয় ছিলেন।

 জজ সাহেব সেই দিবস বিচারাসন গ্রহণ করিয়া অপরাপর দুই একটী সামান্য কার্য্য সম্পন্ন করিলেন, পরে হানিফ্ খাঁর মকর্দ্দমা ডাকিলেন। জেলের একজন প্রধান কর্ম্মচারী কয়েকজন পুলিশ-প্রহরীর সাহায্যে আসামীকে আনিয়া কাঠগড়ার ভিতর প্রবেশ করাইয়া দিলেন। বিচারালয় একেবারে নিস্তব্ধ হইল। জজসাহেব আসামীর দিকে লক্ষ্য করিয়া সজলনেত্রে ও ভগ্নকণ্ঠে কহিলেন, “হানিফ খাঁ! জুরিগণ নিরপেক্ষ ভাবে তোমার মকর্দ্দমার বিচার করিয়া ঠিক ন্যায়সঙ্গত ও যথাযথ অভিমত প্রকাশ করিয়া তোমাকে ডাকাইতি ও খুনি মকর্দ্দমায় দোষী সাব্যস্ত করিয়াছেন। আমিও তাঁহাদিগের মতের সম্পূর্ণ পোষকতা করিয়া আমার কর্ত্তব্য-কর্ম্মের অনুরোধে বাধ্য হইয়া তোমাকে আইনের চরম দণ্ডে দণ্ডিত করিতেছি। তোমার উপর যতগুলি ডাকাইতি ও নরহত্যার প্রমাণ হইয়াছে, একব্যক্তি দ্বারা যে এতগুলি গুরুতর অপরাধ ঘটিতে পারে, তাহা আমি ইতিপূর্ব্বে কখন বিশ্বাস করি নাই। তোমার উপর বিচারালয়ের এই আদেশ হইতেছে যে, “যে পর্য্যন্ত তোমার প্রাণবায়ু বহির্গত না হয়, সেই পর্য্যন্ত তোমার গলায় রজ্জু বেষ্টিত করিয়া তোমাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাইয়া রাখা হইবে।”

 হানিফ খাঁ জজ সাহেবের আদেশ ধীরভাবে শ্রবণ করিয়া, একটু হাসিল ও জজ সাহেবকে লক্ষ্য করিয়া কহিল, “আপনি হিন্দু-বিচারক, আপনার ক্ষমতায় যতদূর কুলায়, তাহার শেষ পর্য্যন্ত আপনি দেখাইলেন, কিন্তু শুনিয়াছি, আপনাদিগের শাস্ত্রে ইহা কহে যে, মানুষ মরে না, তাহার আত্মা পুরাতন দেহ পরিত্যাগ করে মাত্র, ইহা যদি সত্য হয়, তাহা হইলে জজ সাহেব, আপনি জানিবেন, এক দিবস আপনার সহিত আমার সাক্ষাৎ হইবে, আপনার ক্ষমতা আপনি দেখাইলেন, আর সে দিন আমার ক্ষমতা আপনি দেখিবেন।”

 হানিফ খাঁর কথা শেষ হইতে না হইতে জেলের সেই কর্ম্মচারী সাহেব তাহাকে আর সেইস্থানে থাকিতে দিলেন না, পুলিস-প্রহরীর সাহায্যে তাহাকে কাঠগড়া হইতে বাহির করিয়া লইয়া গেলেন।

 হানিফ খাঁকে বিচার-গৃহ হইতে বাহির করিয়া লইয়া যাইবার পর, যে সকল দর্শক ঐ ঘর পূর্ণ করিয়া রাখিয়াছিল, তাহারাও একে একে ঐ ঘর হইতে বহির্গত হইয়া গেল, কিন্তু উহাদিগের মধ্যে কাহাকেও কোনরূপে অসন্তোষ প্রকাশ করিতে দেখা গেল না; অধিকন্তু অনেকেই কহিল, হানিফ খাঁ যেরূপ কার্য্য এ পর্য্যন্ত করিয়া আসিতেছিল, আজ তাহার উপযুক্ত ফল সে পাইল। আজ হইতে আমাদিগের দেশ ঠাণ্ডা হইবে, ডাকাইতি একেবারেই বন্ধ হইয়া যাইবে।

 কেহ কহিল, “পাপ করিয়া কত দিন