৮
ভূতের বিচার।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
এই ঘটনার প্রায় পনের দিবস পরে, সদর হইতে প্রায় দশক্রোশ ব্যবধানে একখানি ক্ষুদ্র পল্লিগ্রামে একটী ডাকাইতি হয়। যাহার বাড়ীতে ডাকাত পড়িয়াছিল, তাহার বাড়ীতে ইতিপূর্বে আর একবার ডাকাইতি হইয়াছিল। হানিফ খাঁ তাহার দল-বলের সহিত ঐ ডাকাইতি করিয়াছিল। যে সময় হানিফ খাঁ ধৃত হইয়া বিচারার্থ প্রেরিত হয়, সেই সময় তিনি হানিফ খাঁকে সনাক্ত করিয়াছিলেন ও বিচারকালে উভয় আদালতে তিনি তাহার বিপক্ষে সাক্ষ্যও প্রদান করিয়াছিলেন।
বর্ত্তমান ডাকাইতির অনুসন্ধান করিবার নিমিত্ত যখন পুলিস-কর্ম্মচারীগণ আগমন করেন, সেই সময় গৃহস্বামী যেরূপ এজাহার দিয়াছিলেন, অনুসন্ধানকারী পুলিস-কর্ম্মচারী তাহা তাঁহার ডাইরিভুক্ত করিয়া লন। তিনি এই কথা বলিয়াছিলেন যে, রাত্রি প্রায় তিন প্রহরের সময় যখন তাঁহারা সকলে নিদ্রিত ছিলেন, সেই সময় হঠাৎ তাঁহার বাড়ীতে ডাকাইত পড়ে, ডাকাইতের সংখ্যা প্রায় ৫০ জনের কম নহে। তাহাদিগের মধ্যে তিনি হানিফ খাঁকে দেখিয়া নিতান্ত বিস্মিত হন, ভাবেন, হানিফ খাঁ ভূত হইয়াও ডাকাইতি পরিত্যাগ করে নাই। যখন ভূতে ডাকাইতি করিতে আসিয়াছে, তখন তাহাদিগকে বাধা দেওয়া কর্ত্তব্য নহে; এই ভাবিয়া তিনি খিড়্কি দরজা খুলিয়া সপরিবারে বাড়ী হইতে বহির্গত হইয়া বাড়ীর সংলগ্ন একটী জঙ্গলের ভিতর আশ্রয় গ্রহণ করেন। ডাকাইতগণ নির্ব্বিবাদে ডাকাইতি করিয়া তাঁহার যথাসর্ব্বস্ব লইয়া প্রস্থান করে।
অনুসন্ধানকারী কর্ম্মচারী বাদীর এজাহারের এই অংশটুকু যদিও তাঁহার ডাইরিভুক্ত করিয়াছিলেন, কিন্তু ভূতের দ্বারা যে ডাকাইতি হইয়াছে, এ কথা তিনি আদৌ বিশ্বাস করেন নাই; তিনি এইরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেন যে, যাঁহার বাড়ীতে ডাকাইতি হইয়াছে, তাঁহার বাড়ীতে হানিফ খাঁ ইতিপূর্ব্বে আর একবার ডাকাইতি করিয়াছিল, হানিফ খাঁর মকর্দ্দমায় তিনি সাক্ষ্য প্রদান করেন। এখন হানিফ খাঁ মরিয়া ভূত হইয়াছে, এই কথাও তিনি শুনিয়াছিলেন, ও ঐ বিষয় মনে মনে আন্দোলন করিতে থাকেন। সুতরাং অন্ধকার রাত্রে ডাকাইতি করিবার সময় তিনি তাহাদিগকে দেখিয়া হতজ্ঞান হইয়া পড়েন ও বিবেচনা করেন, হানিফ খাঁ ভূত হইয়া এই ডাকাইতি করিতেছে। যে ব্যক্তি মরিয়া গিয়াছে, তাহার দ্বারা এই কার্য্য কিরূপে সম্ভবপর হইতে পারে?
পুলিস-কর্ম্মচারীগণ এই মকর্দ্দমার অনেক অনুসন্ধান করিলেন, সন্দেহের উপর নির্ভর করিয়া অনেককে ধরিলেন, কিন্তু প্রকৃত আসামীর একজনও ধড়া পড়িল না বা এই মকর্দ্দমার কোনরূপ কিনারাও হইল না।