পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১০১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ
৯৩

করিল, “কি হইয়াছে মা? এমন করিলি কেন মা?” বিনোদিনী উত্তর দিল না, ললিতাকে আলিঙ্গন করিয়া কাঁদিতে লাগিল। তাহা দেখিয়া ললিতার চক্ষুও জলে ভরিয়া আসিল, উভয়ে অনেকক্ষণ নিঃশব্দে রোদন করিল। ময়ূখ কিছু বুঝিতে না পারিয়া ক্ষণকাল পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ললিতা, কাঁদিতেছ কেন? তোমাদের কি হইয়াছে?” উত্তর না পাইয়া তিনি পুনর্ব্বার ঐ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন। তখন বিনোদিনী চক্ষু মুছিয়া কহিল, “মা, সমস্ত পরিচয় দিতেছি, আগে তোমাদের পরিচয় লই। উনি কি জামাই?”

 ললিতার মুখ লজ্জায় রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল, সে অবগুণ্ঠন টানিয়া দিয়া কহিল, “ছি, তা কেন? উনি ভীমেশ্বরের রাজার ছেলে। গৌরীপুরের ঘাটে যখন আমাকে হার্ম্মাদে ধরে, তখন উনি নৌকায় বসিয়া মাছ ধরিতেছিলেন।” “তবে তুই যে বড় উহাকে লইয়া আসিলি?”

 ললিতার রক্তবর্ণ মুখ লজ্জায় আরও লাল হইয়া উঠিল, সে কহিল, “তাহা বলিতে পারি না।” এই বলিয়া ললিতা মুখ ফিরাইল, বিনোদিনী তখন আর প্রশ্ন করিল না। ময়ূখ বুঝিলেন যে হুগলীতে তাঁহার উপস্থিতির কারণ নির্দ্দেশ করার আবশ্যক হইয়াছে। তিনি খাটের উপর হইতে ললিতাহরণের বৃত্তান্ত বলিতে আরম্ভ করিলেন। ময়ূখের কথা শেষ হইলে বিনোদিনী দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিল, “মা, রাধাবিনোদ তোমাকে রক্ষা করিয়াছেন, তুমি ফিরিঙ্গীর হাতে পড়িয়াই পাগল