পাতা:ময়ূখ - রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৮০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭২
ময়ূখ

 “হাঁ আমি। আমি ললিতার মাতুল, বিনোদিনীর ভ্রাতা। চতুর্দ্দশ বর্ষ-পূর্ব্বে গঞ্জালীস্‌ খড়দহ হইতে আমার যুবতী পত্নী ও বিনোদিনীকে বলপূর্ব্বক লইয়া আসিয়াছিল। আমার পত্নী আত্মহত্যা করিয়াছে, আমি জানিতাম বিনোদিনীও মরিয়াছে। আগ্রায় বিনোদিনীকে দেখিয়া আমি পূর্ব্ব সঙ্কল্প বিস্মৃত হইয়াছি। মনে করিয়াছিলাম যে পর্ত্তুগীজের হুগলী শ্মশান করিয়া তথায় বাস করিব। কিন্তু বিনোদিনীর জার জীবিত আছে। অদ্য হুগলী দুর্গ অধিকৃত হইবে, তখন আমি জীবিত থাকিব না। যদি গঞ্জালীস্‌কে ধরিতে পার, তাহা হইলে স্বহস্তে তাহার শিরচ্ছেদ করিয়া তাহার রক্তসিক্ত মৃত্তিকায় আমার চিতাশয্যা রচনা করিও। অনূপনারায়ণ মরিয়াছে, কল্য বারবক্ সিংহের অধিকার পাইবে।”

 আহদী উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। অর্দ্ধদণ্ড পরে ভীষণ শব্দে হুগলীর পর্ত্তুগীজ গির্জ্জা ও দুর্গ-প্রাকার আকাশে উত্থিত হইল এবং দুইদণ্ড পরে হুগলীর পর্ত্তুগীজ অধিকার লুপ্ত হইল।

 ময়ূখ অসিহস্তে ফিরিঙ্গীপ্রধানের প্রাসাদের নিকটে আসিয়া দেখিলেন যে, মুষ্টিমেয় সেনা লইয়া ডিসুজা তখনও যুদ্ধ করিতেছেন। চতুর্দ্দিক্‌ হইতে আক্রান্ত হইয়াও ডিসুজা আত্মসমর্পণ করিলেন না। ক্ষণকাল মধ্যে পর্ত্তুগীজ বীরগণ স্বজাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিল।