যুবতী হতাশ হইয়া বসিয়া পড়িল। নগরের কোলাহল বৃদ্ধি পাইতে লাগিল, দেখিতে দেখিতে সপ্তগ্রামের অসংখ্য বিপণির সহস্র সহস্র দীপ নিবিয়া গেল। কিয়ৎক্ষণ নিঃশব্দে রোদন করিয়া যুবতী প্রৌঢ়াকে কহিল, “ফতেমা, এখন কি করিব? কোথায় যাইব? কি উপায় হইবে?” ফতেমা কপালে করাঘাত করিয়া কহিল, “উপায় খোদার হাতে। তুমি কথা শুনিতে চাহ না, সপ্তগ্রামে না থাকিয়া আজি যদি জাহাঙ্গীর নগরে যাইতে তাহা হইলে কি এ বিপদে পড়িতে?”
“তোমার কথা শুনিয়া আজ বজ্রা ছাড়িলে এতক্ষণ হুগলী বন্দরে গেরেফ্তার হইতাম।”
“তাহাও ত বটে।” হবিব্ এতক্ষণ নীরবে বসিয়াছিল, সে বলিয়া উঠিল, “বিবি সাহেব, বিপদের সময় কাঁদিলে কি ফল হইবে? আমি দুয়ারটা বন্ধ করিয়া আসি।” হবিব্ উঠিয়া গেল এবং ক্ষণকাল পরে একখানি পুরাতন মরিচাধরা তলোয়ার অনিয়া তাহাতে শাণ দিতে বসিল। যুবতী অশ্রুপুর্ণনেত্রে হাসিয়া কহিল “হবিব, ভাঙ্গা তলোয়ার খানা কোথায় পাইলে?” হবিব্ গম্ভীর ভাবে কহিল, “আমার বাপ দাদার ছিল, আমার দাদা আক্বর বাদশাহের ফৌজে আহদী ছিলেন।”
“তলোয়ার লইয়া কি করিবে?” “কাফের ফিরিঙ্গির সহিত লড়াই করিব।” “তুমি কি লড়াই করিতে জান?” “জানি না জানি, দুই একটার ত মাথা লইতে পারিব।”