পাতা:মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় (সচিত্র) - নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেদান্ত ও বেদান্তসূত্রের ভাষ্যপ্ৰকাশ । ԳÇ বিহিত কৰ্ম্ম করিতে হইবে। যে দ্রব্যের যাহা গুণ, তদনুসারে। কাৰ্য্য করিতে হইবে। মুক্তির উপায় জ্ঞান ও শমদমাদি সাধন এবং জনহিতকরা কাৰ্য্যানুষ্ঠান। রাজা রামমোহন রায়, সগুণ এবং নিগুৰ্ণ, কৰ্ম্ম, এবং জ্ঞান, এই উভয়েরই সমান প্ৰয়োজনীয়তা স্বীকার করিতেন । যে বৈদান্তিক মতে, জগৎ, মাতাপিতা ইত্যাদি সকলকে মিথ্যা জানিয়া সংসার ত্যাগ করা কীৰ্ত্তব্য বলিয়া প্রচার করা হয়, রাজা রামমোহন রায় সেইরূপ মত অবজ্ঞার সহিত অস্বীকার করিতেন । ব্ৰহ্মের স্বরূপ জানা যায় না । কিন্তু তাহাকে জগতের কৰ্ত্তা ও নির্বাহক রূপে, বিধাতারূপে জানা যায়। রামমোহন রায় এইরূপে বেদান্ত দর্শনের অনুসরণ করিয়া ব্ৰহ্মের নিগুৰ্ণ ও সগুণ ভাবের ব্যাখ্যা করিয়াছেন । এ বিষয়ে তিনি শঙ্করাচাৰ্য্যের ভাষ্যানুসারে বেদান্ত মত সমৰ্থন করিয়াছেন । রামমোহন রায় শঙ্করাচাৰ্য্যের ভাস্যানুসারে জগতের মিথ্যাত্বি স্বীকার করিয়াছেন ; কিন্তু সেই শঙ্করোক্ত মিথ্যাত্বি, নিজে অতি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করিয়াছেন। তিনি শঙ্কার-মতে মায়া মানিয়াছেন ;-মায়া অজ্ঞান | ব্ৰহ্মকে মায়া স্পর্শ করে না । কিন্তু তিনি সেই অজ্ঞান বা মায়ার এই প্ৰকার ব্যাখ্যা করিয়াছেন যুে, জীবসকল, ঈশ্বর হইতে পৃথক, এইরূপ বোধই মায়া বা অজ্ঞান। রামানুজমতে পরমেশ্বর মায়ার অধীশ্বর ; অর্থাৎ চিৎশক্তি ও মায়াশক্তি বা চিদাচিৎ শক্তিবিশিষ্ট ঈশ্বরই উপাস্য। নিগুৰ্ণ ব্ৰহ্ম বা ব্ৰহ্মের মায়াতিতিক্ত স্বরূপ স্বীকৃত হয় নাই । রাজা রামমোহন রায় শঙ্করভাষ্যের অনুসরণ করিয়াছেন । কিন্তু শঙ্করকে এমনভাবে বুঝিয়াছিলেন, যাহাতে লৌকিক ব্যবহার, ধৰ্ম্মাধৰ্ম্ম ও উপাসনাদি সম্ভব হয়। শঙ্করভাষ্যেও এ সকল আছে ; তবে নিগুৰ্ণভােব প্ৰবল । রামমোহন রায়ের ব্যাখ্যায়। উভয় দিকের সমান প্ৰয়োজনীয়তা প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে ।