পাতা:মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় (সচিত্র) - নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পণ্ডিতগণের সহিত বিচার δ Σδο ইত্যাদি। সেই সকল সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিগণ নিজ নিজ উপাস্য দেবতাকে ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করিবেন। নিজ নিজ ইষ্ট দেবতাকে সকলের শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করিবেন । দ্বিতীয়, জড়োপাসনা । কাষ্ঠলোষ্ট্রাদি, জলস্থল, বা দেববিগ্ৰহ যাহাই কেন হউক না, কোন জড়পদার্থকে জীবন্তজ্ঞানে উপাসনা করিলেই উহা জড়োপাসনা। মনসা, তুলসী, বট প্রভৃতি বৃক্ষের পূজা জড়োপাসনার অন্তর্গত। সর্প, গো, শৃগাল, শঙ্খচীল প্ৰভৃতি পশু-পক্ষীর পূজার সহিত জড়োপাসনাব সম্বন্ধ আছে । রাজা বলেন যে, উক্তরূপ জড়োপাসনা শাস্ত্ৰে নিষিদ্ধ। তবে অধিকারী বিশেষে, ঈশ্বরোদেশে বা রূপকভাবে জড়োপাসনার বিধি পাওয়া যায়। হিন্দুশাস্ত্রে রূপকভাবে, দেবতা দিগকে ঈশ্বরপূজার চিহ্নস্বরূপ করা হইয়াছে। দুর্বলাধিকারীর জন্য, তঁহাদের চেতনবিগ্ৰহে, ( অর্থাৎ যে প্ৰতিমার প্রাণপ্ৰতিষ্ঠা হইয়াছে ) ঈশ্বরকল্পনা করিয়া ঈশ্বরোদেশে পূজার বিধি আছে। কিন্তু দেবপূজার মধ্যে যে রূপক রহিয়াছে, তাহা আধুনিক হিন্দুরা বুঝেন না । প্ৰাচীন গ্রীক ও রোমানেরা যখন একেশ্বরবাদে উপনীত হইলেন, তখন তাহারা দেবতা দিগকে সেই এক ঈশ্বরের অন্তৰ্গত বলিয়া মনে করিতেন। হিন্দুরাও বলিয়াছেন যে, দেবতারা এক ঈশ্বরের অন্তৰ্গত। কিন্তু তাহাদের এই কথার মধ্যে তিনটি ভাব আছে। প্ৰথম,- দেবতাদি সমস্ত সংসারই ব্ৰহ্মময়, কেবল দেবতা নহে। দ্বিতীয়,- দেবতাদের বিগ্রহে, ঈশ্বর কল্পনা করিয়া পূজা করার বিধি আছে। শাস্ত্রকারেরা জানিতেন যে, ইহা কল্পনা । পরমাত্মার বিগ্ৰহ বা রূপ নাই । তিনি অদ্বিতীয় । দেবতাদিগের বিগ্রহ ও বহুত্ব ঈশ্বরকে স্পর্শ করে না। তৃতীয়,-বহু দেবতার বহু বিগ্ৰহে ঈশ্বরভাবে পূজা করিলে, ইহাই বুঝায় যে, ঐ সকল, ঈশ্বরের মায়াশক্তির বহুবিকাশ।