পাতা:মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় (সচিত্র) - নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজা রামমোহন রায়ের ধৰ্ম্মবিষয়ক মত (\OS অলৌকিক প্ৰত্যাদেশ ও অনৈসৰ্গিক ক্রিয়ায় বিশ্বাস এবং অন্যান্য কুসংস্কার হইতে পরিত্ৰাণ পাওয়া যাইতে পারে। শাস্ত্ৰ যে মানুষের রচিত, ঈশ্বরের আদেশ নহে, ধৰ্ম্মযাজকেরা যে মানুষ্যের উন্নতিপথে কণ্টক নিক্ষেপ করিয়া থাকেন, অনৈসৰ্গিক ঘটনায় বিশ্বাস যে ভ্ৰান্তিমাত্ৰ, ইহা বুঝিতে পারা কেবল বেদান্তাদি শাস্ত্রপাঠে হয় না। সর্বপ্রকার কুসংস্কার উচ্ছেদ করিয়া ঐতিহাসিক ও অলৌকিক অভ্রান্ত শাস্ত্ৰ পরিত্যাগ করিয়া, কেবলমাত্ৰ প্ৰকৃতি বা ব্ৰহ্মাণ্ডগ্ৰন্থ পাঠ করিয়া ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞানোপাৰ্জন, এবং মনুষ্যজাতির মঙ্গলাকাজক্ষা ও উন্নতি চেষ্টাই যে, ঈশ্বরোপাসনার প্রকৃষ্ট উপায়, এই সকল ভাব ও মত রাজা বেদান্তশাস্ত্ৰ, কোরাণ কিম্বা অন্য কোন প্ৰচলিত ধৰ্ম্মশাস্ত্ৰে প্ৰাপ্ত হন নাই। আরবদেশীয় মতাজল এবং মাওয়াহিদীন সম্প্রদায়ের দার্শনিক গ্ৰন্থ সকল এবং ইয়োরোপের অষ্টাদশ শতাব্দীর শাস্ত্ৰনিরপেক্ষ যুক্তিমূলক গ্ৰন্থ সকলে রাজা এই সকল মত প্ৰাপ্ত হইয়াছিলেন। মত ও বিশ্বাস সম্বন্ধে ইহা তাহার একটি গুরুতর পরিবর্তন । তিনি এই স্থানে হিন্দু ও মুসলমানদিগের শাস্ত্ৰনিদিষ্ট সীমা অতিক্ৰম করিয়া এবং ইয়োরোপের মধ্যযুগের কুসংস্কারশৃঙ্খল ভগ্ন করিয়া বৰ্ত্তমান সময়ের সভ্যতার আলোকে উপনীত হইলেন• বৰ্ত্তমান যুগের মূলমন্ত্র মানবের মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাই বৰ্ত্তমান সময়ের সভ্যতা ও জ্ঞানের প্রধান ভিত্তি । শাস্ত্ৰ, জনশ্রুতি, দেশাচার এবং কুসংস্কারের নিগড় হইতে মানবের মুক্তি, ইহাই বৰ্ত্তমান যুগের মূলমন্ত্র। মানুষ এখন সাবালক হইয়া আত্মরক্ষা এবং আত্মাবলম্বন করিতে শিখিয়াছে। এই মূলমন্ত্র, এই মোহিনী শক্তি, ইয়োরোপে অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিশেষভাবে জাগ্রত হইয়া উঠিয়াছিল।