পাতা:মহাভারতীয় বৃহৎ ভীষ্মপর্ব্ব - কাশীরাম দাস.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভীষ্মপর্ব ।

নন্দন॥ দেখি সভাজন সবে পাদ্য অর্ঘ্য দিল। চরণ বন্দিয়া অন্ধ স্তন করিল॥ ধৃতরাষ্ট্র, কহে শুন মুনি মহাশয়। কারো বাক্য না শুনিল আমার তনয়। যুদ্ধ আয়োজন করে দুষ্ট মন্ত্র নায়। অমঙ্গল দেখি ভয় জন্মিল তাহায়॥

 ব্যাসদেব বলেন শুনহ মহাশয়। কুরুকুল ক্ষয় হবে জানিহ নিশ্চয়। কর্ম্ম অনুসারে জীব ভ্রময়ে সংসারে। দৈবে যাহা করে তাহা কে খণ্ডিতে পারে। পৃথিবীর যত ক্ষত্র একত্র হইল এই যুদ্ধে সর্বজন নিশ্চয় মজিল॥ ক্ষত্রবংশ ধ্বংস হেতু হৈল আয়োজন। বৃথা শোক কর কেন তুমি বিচক্ষণ॥ পুত্র সব তোমার যতেক নৃপচয়। পরস্পর যুদ্ধ করি সবে হবে ক্ষয়॥ যুদ্ধ দেখিবারে যদি বাঞ্ছা থাকে মনে। দিব্য চক্ষু দিয়া যাই দেখহ নয়নে। প্রণমিয়া ধৃতরাষ্ট, সকরুণ কহে। পুত্রবধ জ্ঞাতিবধ প্রাণে নাহি সহে॥ তোমার প্রসাদে আমি শুনিব শ্রবণে। এত বলি ধৃতরাষ্ট পড়িল চরণে॥ ক্ষণেক চিন্তিয়া তবে ব্যাস তপোধন। রাজারে বলেন শুন আমার বচন। দিব্য চক্ষে সঞ্জয় দেখিবে ত্রিভুবন ও রাত্রি দিন তোমারে কহিবে বিবরণ॥ ইহাতে শুনিবা যত যুদ্ধের কারণ। গৃহে বসি সর্ব্ব বার্তা পাইবা রাজন॥ যত অল ক্ষণ এই দেখ মহাশয়। দিবসেতে নক্ষত্রের হতেছে উদয়। উদয়াস্ত প্রায় সূর্য্য গগণে বেষ্টিত। বিনা মেঘেবরিষয়ে সঘনে শোণিত॥ অগ্নিবর্ণ প্রায় দেখি সঘনে আকাশ। দিবসেতে ধূমকেতু হয়েছে প্রকাশ॥ প্রতি স্রোতে বহে নদী শোণিত সহিতে। নিঘাত উল্কাপাত পড়ে পৃথিবীতে॥ পর্বত শিখর খসে সাগর উথলে। মহাক্ষ ভাঙ্গিয়া পড়িছে স্থলে স্থলে॥ এই সব অলক্ষণ শুনহ রাজন বংশনাশ হইবার এই সে কারণ॥ এতেক বচন মুনি অন্ধেরে কহিয়া। নিজস্থানে গেলেন সঞ্জয়ে আজ্ঞা দিয়া॥ ব্যাকুল হই যা অন্ধু ভাবে মনে মন। সৈন্যের সাজন করে রাজা দুর্যোধন। দ্রোণাচার্য কৃপাচার্য অশ্বত্থামা রথী। দুঃশাসন কণ আদি যত যোদ্ধাপতি॥ পিতামহ স্থানে সবে করিল গমন।