পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১০১

চামর নিয়ে রথে উঠলেন। ভীম, নকুল, সহদেব ও পুরবাসিগণ রথের পিছনে চললেন। এইরূপে অর্ধ যোজন গিয়ে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরের পাদবন্দনা ক’রে তাঁকে ফিরে যেতে বললেন। তিনি ভীমসেনকে অভিবাদন এবং অর্জুনকে গাঢ় আলিঙ্গন করলেন, নকুল-সহদেব কৃষ্ণকে প্রণাম করলেন, তার পর কৃষ্ণ পাণ্ডবগণের সকলকেই আলিঙ্গন করলেন। অনন্তর যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে কৃষ্ণ দ্বারকার অভিমুখে যাত্রা করলেন। তাঁর রথ অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত পাণ্ডবগণ তাঁর দিকে চেয়ে রইলেন।

 পাণ্ডবগণ ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলে ময় দানব অর্জুনকে বললেন, আমাকে অনুমতি দিন আমি একবার কৈলাসের উত্তরবর্তী মৈনাক পর্বতে যাব। পুরাকালে দানবগণ সেখানে যজ্ঞ করতে ইচ্ছা করেছিলেন, তার জন্য আমি বিন্দু সরোবরের নিকট কতকগুলি বিচিত্র ও মনোহর মণিময় দ্রব্য সংগ্রহ করেছিলাম যা দানবরাজ বৃষপর্বার সভায় দেওয়া হয়। যদি পাওয়া যায় তবে সেগুলি আমি আপনাদের সভার জন্য নিয়ে আসব। বিন্দুসরোবরের তীরে রাজা বৃষপর্বার গদা আছে, তা স্বর্ণবিন্দুতে অলংকৃত, ভারসহ, দৃঢ় এবং লক্ষ গদার তুল্য শত্রুঘাতিনী। সেই গদা ভীমের যোগ্য। সেখানে দেবদত্ত নামক বরুণের শঙ্খও আছে। এই সবই আমি আপনাদের জন্য আনব।

 ঈশান কোণে যাত্রা ক’রে ময় মৈনাক পর্বতে উপস্থিত হলেন। তিনি গদা, শঙ্খ, বৃষপর্বার স্ফটিকময় সভাদ্রব্য, এবং কিংকর নামক রাক্ষসগণ কর্তৃক রক্ষিত ধনরাশি সংগ্রহ করে ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে এলেন এবং ভীমকে গদা আর অর্জুনকে দেবদত্ত শঙ্খ দিলেন। তার পর ময় ত্রিলোকবিখ্যাত দিব্য মণিময় সভা নির্মাণ করলেন যার দীপ্তিতে যেন সূর্যের প্রভাও পরাস্ত হ’ল। এই বিশাল সভা নবোদিত মেঘের ন্যায় আকাশ ব্যাপ্ত ক’রে রইল। তার প্রাচীর ও তোরণ রত্নময়, অভ্যন্তর বহুবিধ উত্তম দ্রব্যে ও চিত্রে সজ্জিত। কিংকর নামক আট হাজার আকাশচারী মহাকায় মহাবল রাক্ষস সেই সভা রক্ষা করত। ময় দানব সেখানে একটি অতুলনীয় সরোবর রচনা করলেন, তার সোপান স্ফটিকনির্মিত, জল অতি নির্মল, বিবিধ মণিরত্নে সমাকীর্ণ এবং স্বর্ণময় পদ্ম মৎস্য ও কূর্মে শোভিত। যে রাজারা দেখতে এলেন তাঁদের কেউ কেউ সরোবর ব’লে বুঝতে না পেরে জলে প’ড়ে গেলেন। সভাস্থানের সকল দিকেই পুষ্পিত বৃক্ষশোভিত উদ্যান ও হংসকারণ্ডবাদি-সমন্বিত পুষ্করিণী ছিল। চোদ্দ মাসে সকল কার্য সম্পন্ন করে ময় যধিষ্ঠিরকে সংবাদ দিলেন যে সভা প্রস্তুত হয়েছে।

 যুধিষ্ঠির ঘৃত ও মধু মিশ্রিত পায়স, ফলমূল, বরাহ ও হরিণের মাংস, তিলমিশ্রিত অন্ন প্রভৃতি বিবিধ ভোজ্য দিয়ে দশ হাজার ব্রাহ্মণ ভোজন করালেন এবং