পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
মহাভারত

তাঁদের উত্তম বসন, মাল্য ও বহু সহস্র গাভী দান করলেন। তার পর গীত বাদ্য সহকারে দেবপূজা ও বিগ্রহস্থাপন ক’রে সভায় প্রবেশ করলেন। সাত দিন ধরে মল্ল বল্ল[১] সূত বৈতালিক প্রভৃতি যুধিষ্ঠিরাদির মনোরঞ্জন করলে। নানা দেশ থেকে আগত ঋষি ও নৃপতিদের সঙ্গে পাণ্ডবগণ সেই সভায় আনন্দে বাস করতে লাগলেন।

২। যুধিষ্ঠির-সকাশে নারদ

 একদিন দেবর্ষি নারদ পারিজাত, রৈবত, সুমুখ ও সৌম্য এই চার জন ঋষির সঙ্গে পাণ্ডবদের সভায় উপস্থিত হলেন। যাধিষ্ঠির যথাবিধি আসন অর্ঘ্য গো মধুপর্ক ও রত্নাদি দিয়ে সংবর্ধনা করলে নারদ প্রশ্নচ্ছলে ধর্ম কাম ও অর্থ বিষয়ক এইপ্রকার বহু উপদেশ দিলেন।―মহারাজ, তুমি অর্থচিন্তার সঙ্গে সঙ্গে ধর্মচিন্তাও কর তো? কাল বিভাগ ক’রে সমভাবে ধর্ম অর্থ ও কামের সেবা কর তো? তোমার দুর্গসকল যেন ধনধান্য জল অস্ত্র যন্ত্র যোদ্ধা ও শিল্পিগণে পরিপূর্ণ থাকে। কঠোর দণ্ড দিয়ে তুমি যেন প্রজাদের অবজ্ঞাভাজন হয়ো না। বীর, বুদ্ধিমান, পবিত্রস্বভাব, সদ্‌বংশজ ও অনুরক্ত ব্যক্তিকে সেনাপতি করবে। সৈন্যগণকে যথাকালে খাদ্য ও বেতন দেবে। শরণাগত শত্রুকে পুত্রবৎ রক্ষা করবে। পররাজ্য জয় ক’রে যে ধনরত্ন পাওয়া যাবে তার ভাগ প্রধান প্রধান যোদ্ধাদের যোগ্যতা অনুসারে দেবে। তোমার যা আয় তার অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশে বা এক-চতুর্থাংশে নিজের ব্যয় নির্বাহ করবে। গণক[২] ও লেখক[৩]গণ প্রত্যহ পূর্বাহ্নে তোমাকে আয়ব্যয়ের হিসাব দেবে। লোভী, চোর, বিদ্বেষী আর অল্পবয়স্ক লোককে কার্যের ভার দেবে না। তোমার রাজ্যে যেন বড় বড় জলপূর্ণ তড়াগ থাকে, কৃষি যেন কেবল বৃষ্টির উপর নির্ভর না করে। কৃষকদের যেন বীজ আর খাদ্যের অভাব না হয়, তারা যেন অল্প সুদে ঋণ পায়। তুমি নারীদের সঙ্গে মিষ্টবাক্যে আলাপ করবে কিন্তু গোপনীয় বিষয় বলবে না। ধনী আর দরিদ্রের মধ্যে বিবাদ হ’লে তোমার অমাত্যরা যেন ঘুষ নিয়ে মিথ্যা বিচার না করে। অন্ধ মূক পঙ্গু অনাথ ও ভিক্ষুদের পিতার ন্যায় পালন করবে। নিদ্রা আলস্য ভয় ক্রোধ মৃদুতা ও দীর্ঘসূত্রতা এই ছয় দোষ পরিহার করবে।

 নারদের চরণে প্রণত হয়ে যুধিষ্ঠির বললেন, আপনার উপদেশে আমার জ্ঞানবৃদ্ধি হ’ল, যা বললেন তাই আমি করব। আপনি যে রাজধর্ম বিবৃত করলেন,


  1. লগুড় যোদ্ধা, লাঠিয়াল।
  2. হিসাব-রক্ষক।
  3. কেরানী।