পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সভাপর্ব
১০৩

তা আমি যথাশক্তি পালন করে থাকি। আমি সৎপথেই চলতে ইচ্ছা করি, কিন্তু পূর্ববর্তী জিতেন্দ্রিয় নৃপতিগণ যে ভাবে কর্তব্য পালন করতেন তা আমি পারি না। তার পর যধিষ্ঠির বললেন, ভগবান, আপনি বহু লোকে বিচরণ ক’রে থাকেন, এই সভার তুল্য বা এর চেয়ে ভাল কোনও সভা দেখেছেন কি? নারদ সহাস্যে বললেন, তোমার এই সভার তুল্য অন্য সভা আমি মনুষ্যলোকে দেখি নি, শুনিও নি। তবে আমি ইন্দ্র যম বরণ কুবের ও ব্রহ্মার সভার কথা বলছি শোন।―

 ইন্দ্রের সভা শত যোজন দীর্ঘ, দেড় শ যোজন আয়ত, পাঁচ যোজন উচ্চ, তা ইচ্ছানসারে আকাশে চালিত করা যায়। সেখানে জরা শোক ক্লান্তি নেই ইন্দ্রাণী শচী সেখানে শ্রী লক্ষ্মী হ্রী কীর্তি ও দ্যুতি দেবীর সঙ্গে বিরাজ করেন। দেবগণ, সিদ্ধ ও সাধ্যগণ, বহু মহর্ষি, রাজা হরিশ্চন্দ্র, গন্ধর্ব ও অপ্সরা সকল সেখানে থাকেন। যমের সভা তৈজস উপাদানে নির্মিত, সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল, তার বিস্তার শত যোজন, দৈর্ঘ্য আরও বেশী। স্বর্গীয় ও পার্থিব সর্ববিধ ভোগ্য বস্তু সেখানে আছে। যযাতি, নহুষ, পুরু, মান্ধাতা, ধ্রুব, কাতর্বীর্যার্জুন, ভরত, নিষধপতি নল, ভগীরথ, রাম-লক্ষ্মণ, তোমার পিতা পাণ্ডু প্রভৃতি সেখানে থাকেন। বরুণের সভা জলমধ্যে নির্মিত, দৈর্ঘ্যপ্রস্থে যমসভার সমান, তার প্রাকার ও তোরণ শুভ্র। সেই সভা অধিক শীতলও নয় উষ্ণও নয়, সেখানে বাসুকি তক্ষক প্রভৃতি নাগগণ এবং বিরোচনপুত্র বলি প্রভৃতি দৈত্যদানবগণ থাকেন। চার সমুদ্র, গঙ্গা যমুনা প্রভৃতি নদী, তীর্থসরোবর, পর্বতসমূহ এবং জলচরগণ মূর্তিমান হয়ে সেখানে বরুণের উপাসনা করে। কুবেরের সভা এক শ যোজন দীর্ঘ, সত্তর যোজন বিস্তৃত, কৈলাসশিখরের ন্যায় উচ্চ ও শুভ্রবর্ণ। যক্ষগণ সেই সভা আকাশে বহন করে। কুবের সেখানে বিচিত্র বসন ও আভরণে ভূষিত হয়ে সহস্র রমণীতে বেষ্টিত হয়ে বাস করেন, দেব ও গন্ধর্বগণ অপ্সরাদের সঙ্গে দিব্যতালে গান করেন। মিশ্রকেশী মেনকা উর্বশী প্রভৃতি অপ্সরা, যক্ষ ও রাক্ষসগণ, বিশ্বাবসু হাহা হুহু প্রভৃতি গন্ধর্ব, এবং ধার্মিক বিভীষণ সেখানে থাকেন। পুলস্ত্যের পুত্র কুবের উমাপতি শিবকে নতশিরে প্রণাম ক’রে সেই সভায় উপবেশন করেন।

 মহারাজ, আমি সূর্যের আদেশে সহস্রবৎসরব্যাপী ব্রহ্মব্রত অনুষ্ঠান করি, তার পর তাঁর সঙ্গে ব্রহ্মার সভায় যাই। সেই সভা অবর্ণনীয়, তার রূপ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়। সেখানে ক্ষুৎপিপাসা বা গ্লানি নেই, তার প্রভা ভাস্করকে অতিক্রম করে। দক্ষ প্রচেত কশ্যপ বশিষ্ঠ দুর্বাসা সনৎকুমার অসিতদেবল প্রভৃতি মহাত্মা, আদিত্য বসু রূদ্র প্রভৃতি গণদেবতা, এবং শরীরী ও অশরীরী পিতৃগণ সেখানে