পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৪
মহাভারত

ব্রহ্মার উপাসনা করেন। ভরতনন্দন যুধিষ্ঠির, দেবতাদের এইসকল সভা আমি দেখেছি, মনুষ্যলোকে সর্বশ্রেষ্ঠ তোমার সভাও এখন দেখলাম।

 যুধিষ্ঠির বললেন, মহামুনি, ইন্দ্রসভার বর্ণনায় আপনি একমাত্র রাজর্ষি হরিশ্চন্দ্রের নামই বললেন। তিনি কোন্‌ কর্মের ফলে সেখানে গেলেন? আপনি যমের সভায় আমার পিতা পাণ্ডুকে দেখেছেন। তিনি কি বললেন তাও জানতে আমার পরম কৌতূহল হচ্ছে।

 নারদ বললেন, রাজা হরিশ্চন্দ্র সকল নরপতির অধীশ্বর সম্রাট ছিলেন, তিনি রাজসূয় যজ্ঞে ব্রাহ্মণগণকে বিস্তর ধন দান করেছিলেন। যে রাজারা রাজসূয় যজ্ঞ করেন, যাঁরা পলায়ন না ক’রে সংগ্রামে নিহত হন, এবং যাঁরা তীব্র তপস্যায় কলেবর ত্যাগ করেন, তাঁরা ইন্দ্রসভায় নিত্য বিরাজ করেন। হরিশ্চন্দ্রের শ্রীবৃদ্ধি দেখে তোমার পিতা পাণ্ডু বিস্মিত হয়েছেন এবং আমাকে অনুরোধ করেছেন যেন মর্ত্যলোকে এসে তাঁর এই কথা আমি তোমাকে বলি―পুত্র, তুমি পৃথিবী জয় করতে সমর্থ, ভ্রাতারা তোমার বশবর্তী, এখন তুমি শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ রাজসূয়ের অনুষ্ঠান কর, তা হলে আমি হরিশ্চন্দ্রের ন্যায় ইন্দ্রসভায় বহুকাল সুখভোগ করতে পারব। অতএব যুধিষ্ঠির, তুমি তোমার পিতার এই সংকল্প সিদ্ধ কর। এই উপদেশ দিয়ে নারদ তাঁর সঙ্গী ঋষিদের নিয়ে দ্বারকার অভিমুখে যাত্রা করলেন।


॥মন্ত্রপর্বাধ্যায়॥

৩। কৃষ্ণ-যুধিষ্ঠিরাদির মন্ত্রণা

 নারদের কথা শুনে যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের বিষয় বার বার ভাবতে লাগলেন। তিনি ধর্মানসারে অপক্ষপাতে সকলের হিতসাধনে প্রবৃত্ত হলেন এবং ক্রোধ ও গর্ব ত্যাগ ক’রে কেবল এই কথাই বলতে লাগলেন―যার যা দেয় আছে তা দাও; ধর্মই সাধু, ধর্মই সাধু। প্রজারা যুধিষ্ঠিরকে পিতার তুল্য জ্ঞান করত, তাঁর শত্রু ছিল না এজন্য তিনি অজাতশত্রু নামে খ্যাত হলেন। তিনি ভ্রাতাদের উপর বিভিন্ন কর্মের ভার দিয়ে তাঁদের সাহায্যে রাজ্য শাসন ও পালন করতে লাগলেন। তাঁর রাজত্বকালে বার্ধুবী (তেজারতি), যজ্ঞকার্য, গোরক্ষা, কৃষি ও বাণিজ্যের সবিশেষ উন্নতি হ’ল। রাজকরের অনাদায়, করের জন্য প্রজাপীড়ন, ব্যাধি ও অগ্নিভয় ছিল না, রাজকর্মচারীদের মিথ্যাচার শোনা যেত না।

 যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ সম্বন্ধে তাঁর মন্ত্রী ও ভ্রাতাদের মত জিজ্ঞাসা করলে