পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
মহাভারত

পতিহন্তাকে বধ করুন। তখন আমরা ভয় পেয়ে জ্ঞাতি ও বন্ধুদের সঙ্গে পশ্চিম দিকে পালিয়ে গেলাম এবং রৈবতক পর্বতের নিকট কুশস্থলীতে দুর্গসংস্কার ক’রে সেখানেই আশ্রয় নিলাম। সেই দুর্গম স্থানে দেবতারাও আসতে পারেন না এবং স্ত্রীলোকেও তা রক্ষা করতে পারে। রৈবতক পর্বত তিন যোজন দীর্ঘ, এক যোজন বিস্তৃত। আমাদের গিরিদুর্গে শত শত দ্বার আছে, আঠার জন দুর্ধর্ষ যোদ্ধা তার প্রত্যেকটি রক্ষা করে। আমাদের কুলে আঠার হাজার ভ্রাতা আছেন। চারুদেষ্ণ, চক্রদেব, তাঁর ভ্রাতা, সাত্যকি, আমি, বলরাম এবং শাম্ব―আমরা এই সপ্ত রথী যুদ্ধে বিষ্ণুর তুল্য। এ ছাড়া কৃতবর্মা, অনাধৃষ্টি, কঙ্ক, বৃদ্ধ অন্ধকভোজ রাজা এবং তাঁর দুই পুত্র প্রভৃতি যোদ্ধারা আছেন। এঁরা সকলেই এখন বৃষ্ণি[১] গণের সঙ্গে বাস করছেন এবং পূর্ব বাসভূমি মথুরার কথা ভাবছেন।

 মহারাজ, জরাসন্ধ জীবিত থাকতে আপনি রাজসূয় যজ্ঞ করতে পারবেন না। তিনি মহাদেবের বরপ্রভাবে ছেয়াশি জন রাজাকে জয় করে তাঁর রাজধানী গিরিব্রজে বন্দী ক’রে রেখেছেন, আরও চোদ্দ জনকে পেলেই তিনি সকলকে বলি দেবেন। যদি আপনি যজ্ঞ করতে চান তবে সেই রাজাদের মুক্তি দেবার এবং জরাসন্ধকে বধ করবার চেষ্টা করুন।

 ভীম বললেন, কৃষ্ণ অর্জুন আর আমি তিন জনে মিলে জরাসন্ধকে জয় করতে পারি। যুধিষ্ঠির বললেন, ভীমার্জুন আমার দুই চক্ষু; জনার্দন, তুমি আমার মন। তোমাদের বিসর্জন দিয়ে আমি কি করে জীবন ধারণ করব? স্বয়ং যমরাজও জরাসন্ধকে জয় করতে পারেন না। অতএব রাজসূয় যজ্ঞের সংকল্প ত্যাগ করাই উচিত মনে করি।

 অর্জন বললেন, মহারাজ, আমি দুর্লভ ধনু, শর, উৎসাহ, সহায় ও শক্তির অধিকারী, বলপ্রয়োগ করাই আমি উচিত মনে করি। যদি আপনি যজ্ঞের সংকল্প ত্যাগ করেন তবে আপনার গুণহীনতাই প্রকাশ পাবে। যদি শান্তিকামী মুনি হ’তে চান তবে এর পর কাষায় বস্ত্র ধারণ করবেন, কিন্তু এখন সাম্রাজ্যলাভ করুন, আমরা শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করব।

৪। জরাসন্ধের পূর্ববৃত্তান্ত

 কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন ভরতবংশের যোগ্য কথা বলেছেন। যুদ্ধ না ক’রে কেউ অমর হয়েছে এমন আমরা শুনি নি। বুদ্ধিমানের নীতি এই, যে অতিপ্রবল 


  1. কৃষ্ণের কুল।