পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৪৯

॥অর্জুনাভিগমনপর্বাধ্যায়॥

৫। কৃষ্ণের আগমন—দ্রৌপদীর ক্ষোভ

 পাণ্ডবগণের বনবাসের সংবাদ পেয়ে ভোজ বৃষ্ণি ও অন্ধক বংশীয়গণ তাঁদের দেখতে এলেন। পাঞ্চালরাজের পুত্রগণ, চেদিরাজ ধৃষ্টকেতু এবং কেকয়রাজপুত্রগণও এলেন। সেই ক্ষত্রিয়বীরগণ বাসুদেব কৃষ্ণকে পুরোবর্তী করে যুধিষ্ঠিরের চতুর্দিকে উপবেশন করলেন।

 বিষণ্ণমনে যুধিষ্ঠিরকে অভিবাদন ক’রে কৃষ্ণ বললেন, যুদ্ধভূমি দুরাত্মা দুর্যোধন কর্ণ শকুনি আর দুঃশাসনের শোণিত পান করবে। তাদের নিহত এবং দলের সকলকে পরাজিত ক’রে আমরা ধর্ম রাজ যুধিষ্ঠিরকে রাজ্যে অভিষিক্ত করব। অনিষ্টকারী শঠকে বধ করাই সনাতন ধর্ম।

 পাণ্ডবগণের পরাজয়ে জনার্দন কৃষ্ণ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, তিনি যেন সর্বলোক দগ্ধ করতে উদ্যত হলেন। অর্জুন তাঁকে শান্ত ক’রে তাঁর পূর্বজন্মের কর্মকলাপ কীর্তন করলেন।—কৃষ্ণ, ভূমি পুরাকালে গন্ধমাদন পর্বতে যত্রসায়ংগৃহ[১] মুনি হয়ে দশ সহস্র বৎসর বিচরণ করেছিলে। আমি ব্যাসদেবের কাছে শুনেছি, তুমি বহু বৎসর পুষ্কর তীর্থে, বিশাল বদরিকায়, সরস্বতীনদীতীরে ও প্রভাস তীর্থে কৃচ্ছসাধন করেছিলে। তুমি ক্ষেত্রজ্ঞ, সর্বভূতের আদি ও অনন্ত, তপস্যার নিধান, সনাতন যজ্ঞস্বরূপ। তুমি সমস্ত দৈত্যদানব বধ ক’রে শচীপতিকে সর্বেশ্বর করেছিলে। তুমিই নারায়ণ হরি ব্রহ্মা সূর্য চন্দ্র কাল আকাশ পৃথিবী। তুমি শিশু বামনরূপে তিন পদক্ষেপে স্বর্গ আকাশ ও মর্ত্য আক্রমণ করেছিলে। তুমি নিসুন্দ নরকাসুর শিশুপাল জরাসন্ধ শৈব্য শতধন্বা প্রভৃতিকে জয় করেছ, রুক্মীকে পরাস্ত ক’রে ভীষ্মকদুহিতা রুক্মিণীকে হরণ করেছ; ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা, যবন কসেরুমান ও শাল্বকে বধ করেছ। জনার্দন, তুমি দ্বারকা নগরী আত্মসাৎ ক’রে সমুদ্রে নিমগ্ন করবে। তোমাতে ক্রোধ বিদ্বেষ অসত্য নৃশংসতা কুটিলতা নেই। ব্রহ্মা তোমার নাভিপদ্ম থেকে উৎপন্ন, তুমি মধ্যকৈটভের হন্তা, শূলপাণি শম্ভু তোমার ললাট থেকে জন্মেছেন।

 কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, তুমি আমারই, আমি তোম।রই, যা আমার তাই তোমার,


  1. যেখানে সন্ধ্যা হয় সেই স্থানই যাঁর গৃহ।