পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
মহাভারত

তবে ঈশ্বরও সেই পাপকর্মে লিপ্ত। আর, যদি কেউ পাপ করেও ফলভোগ না করে তবে তার কারণ—সে বলবান। দুর্বল লোকের জন্যই আমার শোক হচ্ছে।

 যুধিষ্ঠির বললেন, যাজ্ঞসেনী, তোমার কথা সুন্দর, আশ্চর্য ও মনোহর, কিন্তু নাস্তিকের যোগ্য। আমি ধর্মের ফল অন্বেষণ করি না, দাতব্য ব’লেই দান করি, যজ্ঞ করা উচিত ব’লেই যজ্ঞ করি। ফলের আকাঙ্ক্ষা না করেই আমি যথাশক্তি গৃহাশ্রমবাসীর কর্তব্য পালন করি। যে লোক ধর্মকে দোহন ক’রে ফল পেতে চায় এবং নাস্তিক বুদ্ধিতে যে লোক ফললাভ হবে কি হবে না এই আশঙ্কা করে, সে ধর্মের ফল পায় না। দ্রৌপদী, তুমি মাত্রা ছাড়িয়ে তর্ক করছ। ধর্মের প্রতি সন্দেহ ক’রো না, তাতে তির্যগ্‌গতি লাভ হয়। কল্যাণী, তুমি মূঢ় বুদ্ধির বশে বিধাতার নিন্দা করো না, সর্বজ্ঞ সর্বদর্শী ঋষিগণ যার কথা বলেছেন, শিষ্টজন যার আচরণ করছেন, সেই ধর্মের সম্বন্ধে সংশয়াপন্ন হয়ো না।

 দ্রোপদী বললেন, আমি ধর্মের বা ঈশ্বরের নিন্দা করি না, দুঃখিত হয়েই অধিক কথা বলে ফেলেছি। আরও কিছু বলছি, তুমি প্রসন্ন হয়ে শোন। মহারাজ, তুমি অবসাদগ্রস্ত না হয়ে কর্ম কর। যে লোক কেবল দৈবের উপর নির্ভর করে, এবং যে হঠবাদী[১] তারা উভয়েই মন্দবুদ্ধি। দেবারাধনায় যা লাভ হয় তাই দৈব, নিজ কর্মের দ্বারা যে প্রত্যক্ষ ফল লাভ হয় তাই পৌরুষ। ফলসিদ্ধির তিনটি কারণ, দৈব, প্রাক্তনকর্ম ও পুরুষকার। আমাদের যে মহাবিপদ উপস্থিত হয়েছে, তুমি পুরুষকার অবলম্বন করে কর্মে প্রবৃত্ত হ’লে তা নিশ্চয় দূর হবে।

৮। ভীম-যুধিষ্ঠিরের বাদানুবাদ ― ব্যাসের উপদেশ

 ভীম অসহিষ্ণু ও ক্রুদ্ধ হয়ে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, ধর্ম অর্থ ও কাম ত্যাগ করে কেন আমরা তপোবনে বাস করব? উচ্ছিষ্টভোজী শৃগাল যেমন সিংহের কাছ থেকে মাংস হরণ করে সেইরূপ দুর্যোধন আমাদের রাজ্য হরণ করেছে। রাজা, আপনি প্রতিজ্ঞা পালন করছেন, অল্প একটু ধর্মের জন্য রাজ্য বিসর্জন দিয়ে দুঃখ ভোগ করছেন। আমরা আপনার শাসন মেনে নিয়ে বন্ধুদের দুঃখিত এবং শত্রুদের আনন্দিত করছি। ধার্তরাষ্ট্রগণকে বধ করি নি এই অন্যায় কার্যের জন্য আমরা দুঃখ পাচ্ছি। সর্বদা ধর্ম ধর্ম ক’রে আপনি কি ক্লীবের দশা পান নি? যাতে নিজের ও মিত্রবর্গের দুঃখ উৎপন্ন হয় তা ধর্ম নয়, ব্যসন ও কুপথ। কেবল ধর্মে

  1. যে মনে করে সমস্তই অকস্মাৎ ঘটে।