পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৬৩

নপুংসক নর্তক হযে স্ত্রীদের মধ্যে বিচরণ করবে। এই ব’লে উর্বশী স্বগৃহে চ’লে গেলেন।

 উর্বশী শাপ দিয়েছেন শুনে ইন্দ্র স্মিতমুখে অর্জুনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, বৎস, তোমার জন্য কুন্তী আজ সুপত্রবতী হলেন, তুমি ধৈর্যে ঋষিগণকেও পরাজিত করেছ। উর্বশীর অভিশাপ তোমার কাজে লাগবে, অজ্ঞাতবাসকালে তুমি এক বৎসর নপুংসক নর্তক হয়ে থাকবে, তার পর আবার পুরুষত্ব পাবে।

 অর্জুন নিশ্চিন্ত হয়ে চিত্রসেন গন্ধর্বের সংসর্গে সুখে স্বর্গবাস করতে লাগলেন। পাণ্ডুপুত্র অর্জুনের এই পবিত্র চরিতকথা যে নিত্য শোনে তার পাপজনক কামক্রিয়ায় প্রবৃত্তি হয় না, সে মত্ততা দম্ভ ও রাগ পরিহার ক’রে স্বর্গলোকে সুখভোগ করে।


॥নলোপাখ্যানপর্বাধ্যায়॥

১২। ভীমের অধৈর্য ― মহর্ষি বৃহদশ্ব

 একদিন পাণ্ডবরা দ্রৌপদীর সঙ্গে দুঃখিতমনে কাম্যকবনে উপবিষ্ট ছিলেন। ভীম যুধিষ্ঠিরকে বললেন, মহারাজ, আমাদের পৌরুষ আছে, বলবানদের সাহায্য নিয়ে আমরা আরও বলশালী হ’তে পারি, কিন্তু আপনার দ্যূতদোষের জন্য সকলে কষ্ট পাচ্ছি। রাজ্যশাসনই ক্ষত্রিয়ের ধর্ম, বনবাস নয়। আমরা অর্জুনকে ফিরিয়ে এনে এবং জনার্দন কৃষ্ণের সহায়তায় বার বৎসরের পূর্বেই ধার্তরাষ্ট্রদের বধ করব। শত্রুরা দূর হ’লে আপনি বন থেকে ফিরে যাবেন, তা হলে আপনার দোষ হবে না। তার পর আমরা অনেক যজ্ঞ ক’রে পাপমুক্ত হয়ে উত্তম স্বর্গে যাব। রাজা, এইরূপই হ’তে পারে যদি আপনি নির্বুদ্ধিতা দীর্ঘসূত্রতা আর ধর্মপরায়ণতা ত্যাগ করেন। শঠতার দ্বারা শঠকে বধ করা পাপ নয়। ধর্মজ্ঞ লোকের বিচারে দুঃসহ দুঃখের কালে এক অহোরাত্রই এক বৎসরের সমান গণ্য হয়, এইরূপ বেদবচনও শোনা যায়। অতএব আমাদের তের দিনেই তের বৎসর পূর্ণ হয়েছে, দুর্যোধনাদিকে বধ করবার সময় এসেছে। দুর্যোধনের চর সর্বত্র আছে, অজ্ঞাতবাসকালেও সে আমাদের সন্ধান পেয়ে আবার বনবাসে পাঠাবে। যদি অজ্ঞাতবাস থেকে উত্তীর্ণ হই তবে সে আবার আপনাকে দ্যূতক্রীড়ায় ডাকবে। আপনার নিপুণতা নেই, খেলতে খেলতে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েন, সেজন্য আবার আপনি হারবেন।

 যুধিষ্ঠির ভীমকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, মহাবাহু, তের বৎসর উত্তীর্ণ