পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৪
মহাভারত

হলে তুমি আর অর্জুন নিশ্চয় দুর্যোধনকে বধ করবে। তুমি বলছ, সময় এসেছে, কিন্তু আমি মিথ্যা বলতে পারব না। শঠতা না ক’রেও তুমি শত্রু বধ করবে।

 এমন সময় মহর্ষি বৃহদশ্ব সেখানে এলেন। যুধিষ্ঠির যথাশাস্ত্র মধুপর্ক দিয়ে তাঁকে পূজা করলেন। বৃহদশ্ব বিশ্রামের পর উপবিষ্ট হলে যুধিষ্ঠির তাঁকে বললেন, ভগবান, ধূর্ত দ্যূতকারগণ আমার রাজ্য ও ধন শঠতার দ্বারা হরণ করেছে। আমি সরলস্বভাব, অক্ষনিপুণ নই। তারা আমার প্রিয়তমা ভার্যাকে দ্যূতসভায় নিয়ে গিয়েছিল, তার পর দ্বিতীয়বার দ্যূতে জয়লাভ ক’রে আমাদের বনে পাঠিয়েছে। দ্যূতসভায় তারা যে দারুণ কটুবাক্য বলেছে এবং আমার দুঃখার্ত সুহৃদ্‌গণ যা বলেছিলেন তা আমার হৃদয়ে নিহিত আছে, সমস্ত রাত্রি আমি সেইসকল কথা চিন্তা করি। অর্জুনের বিরহেও আমি যেন প্রাণহীন হয়ে আছি। আমার চেয়ে মন্দভাগ্য ও দুঃখার্ত কোনও রাজাকে আপনি জানেন কি?

 মহর্ষি বৃহদশ্ব বললেন, যদি শুনতে চাও তবে এক রাজার কথা বলব যিনি তোমার চেয়েও দুঃখী ছিলেন। যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে বৃহদশ্ব নল রাজার এই উপাখ্যান বললেন—

১৩। নিষধরাজ নল ― দময়ন্তীর স্বয়ংবর

 নিষধ দেশে নল নামে এক বলশালী সদ্‌গুণান্বিত রূপবান অশ্বতত্ত্বজ্ঞ রাজা ছিলেন। তিনি বীরসেনের পুত্র, ব্রাহ্মণপালক, বেদজ্ঞ, দ্যূতপ্রিয়, সত্যবাদী, এবং বৃহৎ অক্ষৌহিণী সেনার অধিপতি। তাঁর সমকালে বিদর্ভ দেশে ভীম নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি ও তাঁর মহিযী ব্রহ্মর্ষি দমনকে সেবায় তুষ্ট ক’রে একটি কন্যা ও তিনটি পুত্র লাভ করেন। কন্যার নাম দময়ন্তী, তিন পুত্রের নাম দম, দান্ত ও দমন। দময়ন্তীর ন্যায় সুন্দরী মনুষ্যলোকে কেউ ছিল না, দেবতারাও তাঁকে দেখে আনন্দিত হতেন।

 লোকে নল ও দময়ন্তীর নিকট পরস্পরের রূপগণের প্রশংসা করত, তার ফলে দেখা না হ’লেও তাঁরা পরস্পরের প্রতি অনুরক্ত হলেন। একদিন নল নির্জন উদ্যানে বেড়াতে বেড়াতে কতকগুলি কনকবর্ণ হংস দেখতে পেলেন। তিনি একটিকে ধরলে সে বললে, রাজা, আমাকে মারবেন না, আমি আপনার প্রিয়কার্য করব, দময়ন্তীর কাছে গিয়ে আপনার সম্বন্ধে এমন ক’রে বলব যে তিনি অন্য পুরুষ কামনা করবেন না। নলের কাছে মুক্তি পেয়ে সেই হংস তার সহচরদের সঙ্গে