পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৬৭

 দময়ন্তীর করুণ প্রার্থনা শুনে এবং নলের প্রতি তাঁর পরম অনুরাগ জেনে ইন্দ্রাদি চারজন লোকপাল তাঁদের দেবচিহ্ণ ধারণ করলেন। দময়ন্তী দেখলেন, তাঁদের গাত্র স্বেদশূন্য, চক্ষু অপলক, দেহ ছায়াহীন। তাঁদের মাল্য অম্লান, অঙ্গ ধূলিশূন্য, ভূমি স্পর্শ না করেই তাঁরা বসে আছেন। কেবল একজনের এইসকল দেবলক্ষণ নেই দেখে দময়ন্তী বুঝলেন তিনিই নল। তখন লজ্জমানা দময়ন্তী বসনপ্রান্ত ধারণ ক’রে নলের স্কন্ধদেশে পরম শোভন মাল্য অর্পণ করলেন। রাজারা হা হা করে উঠলেন, দেবতা ও মহর্ষিগণ সাধু সাধু বললেন। নল হৃষ্টমনে দময়ন্তীকে বললেন, কল্যাণী, তুমি দেবগণের সন্নিধিতে মানুষকেই বরণ করলে, আমাকে তোমার ভর্তা ও আজ্ঞানুবর্তী বলে জেনো। সুহাসিনী, যত দিন দেহে প্রাণ থাকবে তত দিন আমি তোমারই অনুরক্ত থাকব।

 দেবতারা হৃষ্ট হয়ে নলকে বর দিলেন। ইন্দ্র বললেন, যজ্ঞকালে তুমি আমাকে প্রত্যক্ষ দেখবে এবং দেহান্তে উত্তম গতি লাভ করবে। অগ্নি বললেন তুমি যেখানে ইচ্ছা করবে সেখানেই আমার আবির্ভাব হবে এবং অন্তিমে তুমি প্রভাময় দিব্যলোকে যাবে। যম বললেন, তুমি যে খাদ্য পাক করবে তাই সুস্বাদু হবে, তুমি চিরকাল ধর্মপথে থাকবে। বরুণ বললেন, তুমি যেখানে জল চাইবে সেখানেই পাবে। দেবতারা সকলে মিলে নলকে উত্তম গন্ধমাল্য এবং যুগল সন্তান লাভের বর দিলেন।

 বিবাহের পর কিছুকাল বিদর্ভ দেশে থেকে নল তাঁর পত্নীর সঙ্গে স্বরাজ্যে ফিরে গেলেন। তিনি অশ্বমেধাদি বিবিধ যজ্ঞ করলেন। যথাকালে দময়ন্তী একটি পুত্র ও একটি কন্যা প্রসব করলেন, তাদের নাম ইন্দ্রসেন ও ইন্দ্রসেনা।

১৪। কলির আক্রমণ — নল-পুষ্করের দ্যূতক্রীড়া

 স্বয়ংবর থেকে ফেরবার পথে দেবতাদের সঙ্গে দ্বাপর আর কলির দেখা হ’ল। কলি বললেন, দময়ন্তীর উপর আমার মন পড়েছে, তাকে স্বয়ংবরে পাবার জন্য যাচ্ছি। ইন্দ্র হেসে বললেন, স্বয়ংবর হয়ে গেছে, আমাদের সমক্ষেই দময়ন্তী নল রাজাকে বরণ করেছেন। কলি ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, দেবগণকে ত্যাগ করে সে মানুষকে বরণ করেছে, এজন্য তার কঠোর দণ্ড হওয়া উচিত। ইন্দ্র বললেন, কলি, নলের ন্যায় সর্বগুণসম্পন্ন রাজাকে যে অভিশাপ দেয় সে নিজেই অভিশপ্ত হয়ে ঘোর নরকে পড়ে। দেবতাবা চ’লে গেলে কলি দ্বাপরকে বললেন, আমি ক্রোধ সংবরণ করতে পারছি না, নলের দেহে অধিষ্ঠান করে তাকে রাজ্যভ্রষ্ট করব। তুমি আমাকে সাহায্য করবার জন্য অক্ষের (পাশার) মধ্যে প্রবেশ কর।