পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭২
মহাভারত

দুর্দৈববশে দ্যূতক্রীড়ায় পরাজিত হয়ে তিনি বনে এসেছিলেন, সেখানে আমাকে নিদ্রিত অবস্থায় ত্যাগ করে চ’লে গেছেন। বিরহতাপে দিবারাত্র দগ্ধ হয়ে আমি তাঁর অন্বেষণ করছি। রাজমাতা বললেন, কল্যাণী, তোমার উপর আমার স্নেহ হয়েছে, আমার কাছেই তুমি থাক। আমার লোকেরা তোমার পতির অন্বেষণ করবে, হয়তো তিনি ঘুরতে ঘুরতে নিজেই এখানে এসে পড়বেন।

 দময়ন্তী বললেন, বীরজননী, আমি আপনার কাছে থাকব, কিন্তু কারও উচ্ছিষ্ট খাব না বা পা ধুইয়ে দেব না। পতির অন্বেষণের জন্য আমি ব্রাহ্মণদের সঙ্গে দেখা করব, কিন্তু অন্য পুরুষের সঙ্গে কথা বলব না। যদি কোনও পুরুষ আমাকে প্রার্থনা করে তবে আপনি তাকে বধদণ্ড দেবেন। রাজমাতা সানন্দে সম্মত হলেন, এবং নিজ দুহিতা সুনন্দাকে ডেকে বললেন, এই দেবরূপিণী সৈরিন্ধ্রী তোমার সমবয়স্কা, ইনি তোমার সখী হবেন। সুনন্দা হৃষ্টচিত্তে দময়ন্তীকে নিজগৃহে নিয়ে গেলেন।

১৬। কর্কোটক নাগ ― নলের রূপান্তর

 দময়ন্তীকে ত্যাগ ক’রে নল গহন বনে গিয়ে দেখলেন, দাবাগ্নি জ্বলছে এবং কেউ তাঁকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকছে, পুণ্যশ্লোক নল, শীঘ্র আসুন। নল অগ্নির নিকটে এলে এক কুণ্ডলীকৃত নাগরাজ কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, রাজা, আমি কর্কোটক নাগ, মহর্ষি নারদকে প্রতারিত করেছিলাম সেজন্য তিনি শাপ দিয়েছেন — এই স্থানে স্থাবরের ন্যায় পড়ে থাক, নল যখন তোমাকে অন্যত্র নিয়ে যাবেন তখন শাপমুক্ত হবে। আপনি আমাকে রক্ষা করুন, আমি সখা হয়ে আপনাকে সৎপরামর্শ দেব। এই ব’লে নাগেন্দ্র কর্কোটক অঙ্গুষ্ঠ-প্রমাণ হলেন, নল তাঁকে নিয়ে দাবাগ্নিশূন্য স্থানে চললেন।

 যেতে যেতে কর্কোটক বললেন, নিষধরাজ, আপনি পদক্ষেপ গণনা ক’রে চলুন, আমি আপনার মহোপকার করব। নল দশম পদক্ষেপ করবামাত্র কর্কোটক তাঁকে দংশন করলেন, তৎক্ষণাৎ নলের রূপ বিকৃত হয়ে গেল। কর্কোটক নিজ মূর্তি ধারণ ক’রে বললেন, মহারাজ, লোকে আপনাকে যাতে চিনতে না পারে সেজন্য আপনার প্রকৃত রূপ অন্তর্হিত ক’রে দিলাম। যে কলি কর্তৃক আবিষ্ট হয়ে আপনি প্রতারিত ও মহাদুঃখে পতিত হয়েছেন সে এখন আমার বিষে আক্রান্ত হয়ে আপনার দেহে কষ্টে বাস করবে। আপনি অযোধ্যায় ইক্ষাকুবংশীয় রাজা ঋতুপর্ণের কাছে গিয়ে বললুন যে আপনি বাহুক নামক সারথি। তিনি আপনার নিকট অশ্বহৃদয়