পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
মহাভারত

নিজের ক্ষমতায় নিজেকে রক্ষা করেন। পক্ষী যার বস্ত্র হরণ করেছিল সেই মোহগ্রস্ত বিপদাপন্ন ক্ষুধার্ত পতি পরিত্যাগ করে চলে গেলেও সতী নারী ক্রুদ্ধ হন না।

 কেশিনীর কাছে সমস্ত শুনে দময়ন্তী অনুমান করলেন, বাহুকই নল। তিনি কেশিনীকে বললেন, তুমি আবার বাহুকের কাছে গিয়ে তাঁর আচরণ ও কার্যের কৌশল লক্ষ্য কর। তিনি চাইলেও তাঁকে জল দিও না। কেশিনী পুনর্বার গেল এবং ফিরে এসে বললে, এমন শুদ্ধাচার মানুষ আমি কখনও দেখি নি। ইনি অনুচ্চ দ্বারে প্রবেশকালে নত হন না, দ্বারই তাঁর জন্য উচ্চ হয়ে যায়। ঋতুপর্ণের ভোজনের জন্য আমাদের রাজা বিবিধ পশুমাংস পাঠিয়েছেন, মাংস ধোবার জন্য কলসও সেখানে আছে। বাহুকের দৃষ্টিপাতে কলস জলপূর্ণ হয়ে গেল। মাংস ধুয়ে উননে চড়িয়ে বাহুক এক মুষ্টি তৃণ সূর্যকিরণে ধরলেন, তখনই তৃণ প্রজ্জ্বলিত হ’ল। তিনি অগ্নি স্পর্শ করলে দগ্ধ হন না, পুষ্প মর্দন করলে তা বিকৃত হয় না, আরও সুগন্ধ ও বিকশিত হয়। দময়ন্তী বললেন, কেশিনী, তুমি আবার যাও, তাঁকে না জানিয়ে তাঁর রাঁধা মাংস কিছু নিয়ে এস। কেশিনী মাংস আনলে দময়ন্তী তা চেখে বুঝলেন যে নলই তা রেঁধেছেন। তখন তিনি তাঁর পুত্রকন্যাকে কেশিনীর সঙ্গে বাহুকের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। নল ইন্দ্রসেন ও ইন্দ্রসেনাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তার পর কোশনীকে বললেন, এই বালক-বালিকা আমার পুত্র-কন্যার সদৃশ সেজন্য আমি কাঁদছি। ভদ্রে, আমরা অন্য দেশের অতিথি, তুমি বার বার এলে লোকে দোষ দেবে, অতএব তুমি যাও।

 দময়ন্তী তাঁর মাতাকে বললেন, আমি বহু পরীক্ষায় বুঝেছি যে বাহুকই নল, কেবল তাঁর রূপের জন্য আমার সংশয় আছে। এখন আমি নিজেই তাঁকে দেখতে চাই, আপনি পিতাকে জানিয়ে বা না জানিয়ে আমাকে অনুমতি দিন। পিতা মাতার সম্মতিক্রমে দময়ন্তী নলকে তাঁর গৃহে আনালেন। কাষায়বসনা জটাধারিণী মলিনাঙ্গী দময়ন্তী সরোদনে বললেন, বাহুক, নিদ্রিত পত্নীকে বনে পরিত্যাগ ক’রে চ’লে গেছেন এমন কোনও ধর্মজ্ঞ পুরুষকে জান কি? পুণ্যশ্লোক নল ভিন্ন আর কে সন্তানবতী পতিব্রতা ভার্যাকে বিনা দোষে ত্যাগ করতে পারে? নল বললেন, কল্যাণী, যার জন্য আমার রাজ্য নষ্ট হয়েছে সেই কলির প্রভাবেই আমি তোমাকে ত্যাগ করেছিলাম। তোমার অভিশাপে দগ্ধ হয়ে কলি আমার দেহে বাস করছিল, এখন আমি তাকে জয় করেছি, সেই পাপ দূর হয়েছে। কিন্তু তুমি দ্বিতীয় পতি বরণে প্রবৃত্ত হয়েছ কেন? দময়ন্তী কৃতাঞ্জলি হয়ে কম্পিতদেহে বললেন, নিষধরাজ, আমার দোষ দিতে পার না, দেবগণকে বর্জন ক’রে আমি তোমাকেই বরণ করেছিলাম। তোমার অন্বেষণে