পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৭৯

আমি সর্বত্র লোক পাঠিয়েছিলাম। ব্রাহ্মণ পর্ণাদের মুখে তোমার বাক্য শুনেই তোমাকে আনাবার জন্য আমি স্বয়ংবর রূপ উপায় অবলম্বন করেছি। যদি আমি পাপ করে থাকি তবে বায়ু, সূর্য চন্দ্র আমার প্রাণ হরণ করুন।

 অন্তরীক্ষ থেকে বায়, বললেন, নল, এঁর কোনও পাপ নেই, আমরা তিন বৎসর এঁর সাক্ষী ও রক্ষী হয়ে আছি। তুমি ভিন্ন কেউ একদিনে শত যোজন পথ অতিক্রম করতে পারে না, তোমাকে আনাবার জন্যই ইনি অসাধারণ উপায় স্থির করেছিলেন। তখন পুষ্পেবৃষ্টি হ’ল, দেবদুন্দুভি বাজতে লাগল। নাগরাজ কর্কোটকের বস্ত্র পরিধান ক’রে নল তাঁর পূর্বরূপ ফিরে পেলেন, দময়ন্তী তাঁকে আলিঙ্গন ক’রে রোদন করতে লাগলেন। অর্ধসঞ্জাতশস্য ভূমি জল পেয়ে যেমন হয়, সেইরূপ দময়ন্তী ভর্তাকে পেয়ে পরিতৃপ্ত হলেন।

১৯। নলের রাজ্যোদ্ধার

 পরদিন প্রভাতকালে নল রাজা সুসজ্জিত হয়ে দময়ন্তীর সঙ্গে শ্বশুর ভীম রাজার কাছে গিয়ে অভিবাদন করলেন, ভীমও পরম আনন্দে নলকে পত্রের ন্যায় গ্রহণ করলেন। রাজধানী ধ্বজ পতাকা ও পুষ্পে অলংকৃত করা হ’ল, নগরবাসীরা হর্ষধ্বনি করতে লাগল। ঋতুপর্ণ বিস্মিত ও আনন্দিত হয়ে নলকে বললেন, নিষধরাজ, ভাগ্যক্রমে আপনি পত্নীর সঙ্গে পুনর্মিলিত হলেন। আমার গৃহে আপনার অজ্ঞাতবাসকালে যদি আমি কোনও অপরাধ করে থাকি তো ক্ষমা করুন। নল বললেন, মহারাজ, আপনি কিছুমাত্র অপরাধ করেন নি, আপনি পূর্বে আমার সখা ও আত্মীয় ছিলেন, এখন আরও প্রীতিভাজন হলেন। তার পর ঋতুপর্ণ নলের নিকট অশ্বহৃদয় শিক্ষা করে এবং তাঁকে অক্ষহৃদয় দান করে স্বরাজ্যে প্রস্থান করলেন।

 এক মাস পরে নল সসৈন্যে নিজ রাজ্যে প্রবেশ ক’রে পুষ্করকে বললেন, আমি বহু ধন উপার্জন করেছি, পুনর্বার দ্যূতক্রীড়া করব। আমার সমস্ত ধন ও দময়ন্তীকে পণ রাখছি, তুমি রাজ্য পণ রাখ। যদি দ্যূতক্রীড়ায় অসম্মত হও তবে আমার সঙ্গে দ্বৈরথ যুদ্ধ কর। পুষ্কর সহাস্যে বললেন, ভাগ্যক্রমে আপনি আবার এসেছেন, আমি আপনার ধন জয় ক’রে নেধ, সুন্দরী দময়ন্তী আমার সেবা করবেন। নলের ইচ্ছা হ’ল তিনি খড়্‌গাঘাতে পুষ্করের শিরশ্ছেদ করেন, কিন্তু কোধ সংবরণ ক’রে বললেন, এখন বাক্যব্যয়ে লাভ কি, আগে জয়ী হও তার পর ব’লো।

 এক পণেই নল পুষ্করের সর্বস্ব জয় করলেন। তিনি বললেন, মূর্খ, তুমি