পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
মহাভারত

বৈদর্ভীকে পেলে না, নিজেই সপরিবারে তাঁর দাস হ’লে। আমার পূর্বের পরাজয় কলির প্রভাবে হয়েছিল, তোমার তাতে কর্তৃত্ব ছিল না। পরের দোষ তোমাতে আরোপ করব না, তুমি আমার ভ্রাতা, আমার রাজ্যের এক অংশ তোমাকে দিলাম। তোমার প্রতি আমার স্নেহ কখনও নষ্ট হবে না, তুমি শত বৎসর জীবিত থাক। এই ব’লে নল ভ্রাতাকে আলিঙ্গন করলেন। পুণ্যশ্লোক নলকে অভিবাদন ক’রে কৃতাঞ্জলি হয়ে পুষ্কর বললেন, মহারাজ, আপনার কীর্তি অক্ষয় হক, আপনি আমাকে প্রাণ ও রাজ্য দান করলেন, আপনি অযুত বৎসর জীবিত থাকুন। এক মাস পরে পুষ্কর হৃষ্টচিত্তে নিজ রাজধানীতে চলে গেলেন। অমাত্যগণ নগরবাসী ও জনপদবাসী সকলে আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে নলকে বললেন, মহারাজ, আমরা পরম সুখ লাভ করেছি; দেবগণ যেমন দেবরাজের পূজা করেন সেইরূপ আপনার পূজা করবার জন্য আমরা আবার আপনাকে পেয়েছি।


 নলোপাখ্যান শেষ ক’রে বৃহদশ্ব বললেন, যুধিষ্ঠির, নল রাজা দ্যূতক্রীড়ার ফলে ভার্যার সঙ্গে এইরূপ দুঃখভোগ করেছিলেন, পরে আবার সমৃদ্ধিলাভও করেছিলেন। কর্কোটক নাগ, নল-দময়ন্তী আর রাজর্ষি ঋতুপর্ণের ইতিহাস শুনলে কলির ভয় দূর হয়। তুমি আশ্বস্ত হও, বিষাদগ্রস্ত হয়ো না। তোমার ভয় আছে, আবার কেউ দ্যূতক্রীড়ায় তোমাকে আহ্বান করবে; এই ভয় আমি দূর করছি। আমি সমগ্র অক্ষহৃদয় জানি, তুমি তা শিক্ষা কর। এই ব’লে বৃহদশ্ব যুধিষ্ঠিরকে অক্ষহহৃদয় দান ক’রে তীর্থভ্রমণে চলে গেলেন।


॥তীর্থযাত্রাপর্বাধ্যায় ॥

২০। যুধিষ্ঠিরাদির তীর্থযাত্রা

 অর্জুনের বিরহে বিষণ্ণ হয়ে পাণ্ডবগণ কাম্যকবন ত্যাগ করে অন্যত্র বাবার ইচ্ছা করলেন। একদিন দেবর্ষি নারদ এসে দধিষ্ঠিরকে বললেন, ধার্মিকশ্রেষ্ঠ, তোমার কি প্রয়োজন বল। যুধিষ্ঠির প্রণাম ক’রে বললেন আপনি প্রসন্ন থাকায় আমার সকল প্রয়োজন সিদ্ধ হয়েছে মনে করি। তীর্থ পর্যটনে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলে কি ফললাভ হয় তাই আপনি বলুন।