পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৮১

 বহু শত তীর্থের[১] কথা সবিস্তারে বিবৃত করে নারদ বললেন, যে লোক যথারীতি তীর্থ পরিভ্রমণ করে সে শত অশ্বমেধ যজ্ঞেরও অধিক ফল পায়। এখানকার ঋষিগণ তোমার প্রতীক্ষা করছেন, লোমশ মুনিও আসছেন, তুমি এঁদের সঙ্গে তীর্থপর্যটন কর। নারদ চ’লে গেলে পুরোহিত ধৌম্যও বহু তীর্থের বর্ণনা করলেন। তার পর লোমশ মুনি এসে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, বৎস, আমি একটি অতিশয় প্রিয় সংবাদ বলব, তোমরা শোন। আমি ইন্দ্রলোক থেকে আসছি, অর্জুন মহাদেবের নিকট ব্রহ্মশির নামক অস্ত্র লাভ করেছেন, যম কুবের বরুণ ইন্দ্রও তাঁকে বিবিধ দিব্যাস্ত্র দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাবসুর পুত্র চিত্রসেনের নিকট নৃত্য গীত বাদ্য ও সামগান যথাবিধি শিখেছেন। দেবরাজ ইন্দ্র তোমাকে এই কথা বলতে বলেছেন।—অর্জুনের অস্ত্রশিক্ষা শেষ হয়েছে, তিনি একটি মহৎ দেবকার্য সম্পাদন ক’রে শীঘ্র তোমাদের কাছে ফিরে যাবেন। আমি জানি যে সূর্য পুত্র কর্ণ সত্যপ্রতিজ্ঞ, মহোৎসাহী, মহাবল, মহাধনুর্ধর; কিন্তু তিনি এখন অর্জুনের ষোড়শাংশের একাংশের তুল্যও না। কর্ণের যে সহজাত কবচকে তোমরা ভয় কর তাও আমি হরণ করব। তোমার যে তীর্থযাত্রার অভিলাষ হয়েছে তার সম্বন্ধে এই ব্রহ্মর্ষি লোমশই তোমাকে উপদেশ দেবেন।

 এই বার্তা জানিয়ে লোমশ বললেন, ইন্দ্র আর অর্জুনের অনুরোধে আমি তোমার সঙ্গে তীর্থভ্রমণ করব এবং সকল ভয় থেকে তোমাকে রক্ষা করব। যুধিষ্ঠির, তুমি লঘু[২] হও, লঘু হ’লে স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবে।

 উপস্থিত সকল লোককে যুধিষ্ঠির বললেন, যে ব্রাহ্মণ ও যতিগণ ভিক্ষাভোজী, যাঁরা ক্ষুধা তৃষ্ণা পথশ্রম আর শীতের কষ্ট সইতে পারেন না, তাঁরা নিবৃত্ত হ’ন। যাঁরা মিষ্টভোজী, বিবিধ পক্কান্ন লেহ্য পেয় মাংস প্রভৃতি খেতে চান, যাঁরা পাচকের পিছনে পিছনে থাকেন, তাঁরাও আমার সঙ্গে যাবেন না। যাঁদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি তাঁরাও নিবৃত্ত হ’ন। যেসকল পুরবাসী রাজভক্তির বশে আমার সঙ্গে এসেছেন, তাঁরা মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে যান, তিনিই সকলকে উপযুক্ত বৃত্তি দেবেন। যদি তিনি না দেন তবে আমার প্রীতির নিমিত্ত

  1. এই প্রসঙ্গে দ্বারবতীর পরে পিণ্ডারক তীর্থের বর্ণনায় আছে—এখনও এই তীর্থে পদ্মচিহ্ণিত ত্রিশূলাঙ্কিত বহু মদ্রা (seal) পাওয়া যায়। বোধ হয় এইসকল মুদ্রা মহেঞ্জোদারোতে প্রাপ্ত মুদ্রার অনুরূপ।
  2. অর্থাৎ বেশী লোকজন জিনিসপত্র সঙ্গে নিও না।