পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
মহাভারত

পাঞ্চালরাজ দেবেন। তখন বহু পুরবাসী দুঃখিতমনে হস্তিনাপুরে চ’লে গেলেন. ধৃতরাষ্ট্রও তাঁদের তুষ্ট করলেন।

 কাম্যকবনবাসী ব্রাহ্মণগণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, আমাদেরও তীর্থভ্রমণে নিয়ে চলুন, আপনাদের সঙ্গে না হলে আমরা যেতে পারব না। লোমশ ও ধৌম্যের মত নিয়ে যুধিষ্ঠির ব্রাহ্মণদের প্রস্তাবে সম্মত হলেন। তার পর ব্যাস পর্বত ও নারদ ঋষি এসে স্বস্ত্যয়ন করলেন। তাঁদের প্রণাম করে পাণ্ডবগণ ও দ্রৌপদী অগ্রহায়ণ-পূর্ণিমার শেষে পুষ্যা-নক্ষত্রযোগে ব্রাহ্মণদের সঙ্গে নিষ্ক্রান্ত হলেন। পাণ্ডবগণ চীর অজিন ও জটা ধারণ করে এবং অভেদ্য কবচ ও অশ্বে সজ্জিত হয়ে পূর্বদিকে যাত্রা করলেন। ইন্দ্রসেন প্রভৃতি ভৃত্যগণ, চতুর্দশাধিক রথ পাচকগণ ও পরিচারকগণ তাঁদের সঙ্গে গেল।

২১। ইল্বল-বাতাপি ― অগস্ত্য ও লোপামুদ্রা ― ভৃগুতীর্থ

 পাণ্ডবগণ নৈমিযারণ্য প্রয়াগ প্রভৃতি তীর্থ দর্শন করে অগস্ত্যের আশ্রম মণিমতী পুরীতে এলেন। লোমশ বললেন, পুরাকালে এখানে ইল্বল নামে এক দৈত্য বাস করত, তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতার নাম বাতাপি। একদিন ইল্বল এক তপস্বী ব্রাহ্মণকে বললে, আমাকে একটি ইন্দ্রতুল্য পুত্র দিন। ব্রাহ্মণ তার প্রার্থনা পূর্ণ করলেন না। ইল্বল অতিশয় ক্রুদ্ধ হল এবং মায়াবলে বাতাপিকে ছাগ বা মেষে রূপান্তরিত ক’রে তার মাংস রেঁধে ব্রাহ্মণভোজন করাতে লাগল। ভোজনের পর ইল্বল তার ভ্রাতাকে উচ্চস্বরে ডাকত, তখন ব্রাহ্মণের পার্শ্ব ভেদ ক’রে বাতাপি হাসতে হাসতে বেরিয়ে আসত। দুরাত্মা ইল্বল এইরূপে বহু ব্রাহ্মণ হত্যা করলে।

 এই সময়ে অগস্ত্য মুনি একদিন দেখলেন, একটি গর্তের মধ্যে তাঁর পিতৃপুরুষগণ অধোমুখে ঝুলছেন। অগস্ত্যের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বললেন, বংশলোপের সম্ভাবনায় আমরা এই অবস্থায় আছি; যদি তুমি সৎপুত্রের জন্ম দিতে পার তবে আমরা নরক থেকে মুক্ত হব, তুমিও সদ্‌গতি লাভ করবে। অগস্ত্য বললেন, পিতৃগণ, নিশ্চিত হ’ন, আমি আপনাদের অভিলাষ পূর্ণ করব।

 অগস্ত্য নিজের যোগ্য স্ত্রী খুঁজে পেলেন না। তখন তিনি সর্ব প্রাণীর শ্রেষ্ঠ অঙ্গের সমবায়ে এক অত্যুত্তমা স্ত্রী কল্পনা করলেন। সেই সময়ে বিদর্ভ দেশের রাজা সন্তানের জন্য তপস্যা করছিলেন, তাঁর মহিষীর গর্ভ থেকে অগস্ত্যের সেই সংকল্পিত ভার্যা ভূমিষ্ঠ হলেন। সৌদামিনীর ন্যায় সুন্দরী সেই কন্যার নাম