পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
মহাভারত

অগস্ত্য বললেন, আমরা জানি যে তুমি মহাধনী। অন্যের ক্ষতি না করে আমাদের যথাশক্তি ধন দাও। ইল্বল বললে, আমি যা যা দান করতে চাই তা যদি বলতে পারেন তবেই দেব। অগস্ত্য বললেন, তুমি এই রাজাদের প্রত্যেককে দশ হাজার গরু আর দশ হাজার স্বর্ণমুদ্রা এবং আমাকে তার দ্বিগুণ দিতে চাও, তা ছাড়া একটি হিরণ্ময় রথ ও দুই অশ্বও আমাকে দিতে ইচ্ছা করেছ। ইল্বল দুঃখিতমনে এই সকল ধন এবং তারও অধিক দান করলে। তখন সমস্ত ধন নিয়ে অগস্ত্য তাঁর আশ্রমে এলেন, রাজারাও বিদায় নিয়ে চ’লে গেলেন।

 লোপামুদ্রাকে তাঁর অভীষ্ট শয্যা ও বসনভূষণাদি দিয়ে অগস্ত্য বললেন, তুমি কি চাও — সহস্র পুত্র, শত পুত্র, দশ পুত্র, না সহস্র পুত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এক পুত্র? লোপামুদ্রা এক পুত্র চাইলেন। তিনি গর্ভবতী হয়ে সাত মাস পরে দৃঢ়স্যু নামে পুত্র প্রসব করলেন। এই পুত্র মহাকবি মহাতপা এবং বেদাদি শাস্ত্রে অভিজ্ঞ হয়েছিলেন। এঁর অন্য নাম ইধ্ণবাহ।

 উপাখ্যান শেষ করে লোমশ বললেন, যুধিষ্ঠির, অগস্ত্য এইরূপে প্রহ্লাদবংশজাত বাতাপিকে বিনষ্ট করেছিলেন। এই তাঁর আশ্রম। এই পুণ্যসলিলা ভাগীরথী, পতাকার ন্যায় বায়ুতে আন্দোলিত এবং পর্বতশৃঙ্গে প্রতিহত হয়ে শিলাতলে নাগিনীর ন্যায় নিপতিত হচ্ছেন। তোমরা এই নদীতে ইচ্ছানুসারে অবগাহন কর।

 তার পর পাণ্ডবগণ ভৃগুতীর্থে এলে লোমশ বললেন, পুরাকালে রামরূপে বিষ্ণু ভার্গব পরশুরামের তেজোহরণ করেছিলেন। পরশুরাম ভীত ও লজ্জিত হয়ে মহেন্দ্র পর্বতে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। এক বৎসর পরে পিতৃগণ তাঁকে নিস্তেজ গর্বহীন ও দুঃখিত দেখে বললেন, পুত্র, বিষ্ণুর নিকটে তোমার দর্পপ্রকাশ উচিত হয় নি। তুমি দীপ্তোদ তীর্থে যাও, সেখানে সত্যযুগে তোমার প্রপিতামহ ভৃগু তপস্যা করেছিলেন। সেই তীর্থে পবিত্র বধূসর নদীতে স্নান করলে তোমার পূর্বের তেজ ফিরে পাবে। পিতৃগণের উপদেশ অনুসারে পরশুরাম এই ভৃগুতীর্থে স্নান ক’রে তাঁর পূর্বতেজ লাভ করেছিলেন।

২২। দধীচ ― বৃত্রবধ ― সমুদ্রশোষণ

 যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে লোমশ অগস্ত্যের কীর্তিকথা আরও বললেন।— সত্যযুগে কালেয় নামে এক দল দুর্দান্ত দানব ছিল, তারা বৃত্রাসুরের সহায়তায়