পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৮৫

দেবগণকে আক্রমণ করে। ব্রহ্মার উপদেশে দেবগণ নারায়ণকে অগ্রবর্তী ক’রে দধীচ মুনির কাছে গেলেন এবং চরণ বন্দনা ক’রে তাঁর অস্থি প্রার্থনা করলেন। দধীচ প্রীতমনে তৎক্ষণাৎ প্রাণত্যাগ করলেন, দেবগণ তাঁর অস্থি নিয়ে বিশ্বকর্মাকে দিলেন। সেই অস্থি দিয়ে বিশ্বকর্মা ভীমরূপ বজ্র নির্মাণ করলেন। ইন্দ্র সেই বজ্র ধারণ করে দেবগণ কর্তৃক রক্ষিত হয়ে বৃত্রকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু দেবতারা কালেয় দানবদের বেগ সইতে পারলেন না, রণে ভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করলেন। তখন মোহাবিষ্ট ইন্দ্রের বলবৃদ্ধির জন্য নারায়ণ ও মহর্ষিগণ নিজ নিজ তেজ দিলেন। দেবরাজ বলান্বিত হয়েছেন জেনে বৃত্র ভয়ংকর সিংহনাদ করে উঠল, সেই শব্দে সন্ত্রস্ত হয়ে ইন্দ্র অবশভাবে বজ্র নিক্ষেপ করলেন। মহাসুর বৃত্র নিহত হয়ে মন্দর পর্বতের ন্যায় ভূপতিত হ’ল। তার পর দেবতারা ত্বরিত হয়ে দৈত্যদের বধ করতে লাগলেন, তারা পালিয়ে গিয়ে সমুদ্রগর্ভে আশ্রয় নিলে।

 কালেয় দানবগণ রাত্রিকালে সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসে তপস্বী ব্রাহ্মণদের বধ করতে লাগল। বিষ্ণুর উপদেশে ইন্দ্রাদি দেবগণ অগস্ত্যের কাছে গিয়ে বললেন, আপনি মহাসমুদ্র পান ক’রে ফেলুন, তা হলে আমরা কালেয়গণকে বধ করতে পারব। অগস্ত্য সম্মত হয়ে দেবতাদের সঙ্গে ফেনময় তরঙ্গায়িত জলজন্তুসমাকুল সমুদ্রের তীরে এলেন এবং জলরাশি পান করলেন। দেবতারা দানবদের বধ করলেন, হতাবশিষ্ট কয়েকজন কালেয় বসুধা বিদীর্ণ ক’রে পাতালে আশ্রয় নিলে। অনন্তর দেবগণ অগস্ত্যকে বললেন, আপনি যে জল পান করেছেন তা উদ্‌গার ক’রে সমুদ্র আবার পূর্ণ করুন। অগস্ত্য বললেন, সে জল জীর্ণ হয়ে গেছে, তোমরা অন্য ব্যবস্থা কর। তখন ব্রহ্মা দেবগণকে আশ্বাস দিলেন বহুকাল পরে মহারাজ ভগীরথ সমুদ্রকে আবার জলপূর্ণ করবেন।

 একদা বিন্ধ্যপর্বত সূর্যকে বললে, উদয় ও অস্তের সময় তুমি যেমন মেরু পর্বত প্রদক্ষিণ কর সেইরূপ আমাকেও প্রদক্ষিণ কর। সূর্য বললেন, আমি স্বেচ্ছায় মেরু প্রদক্ষিণ করি না, এই জগতের যিনি নির্মাতা তাঁরই বিধানে করি। বিন্ধ্য ক্রুদ্ধ হয়ে সহসা বাড়তে লাগল, যাতে চন্দ্রসূর্যের পথরোধ হয়। দেবতারা অগস্ত্যের শরণ নিলেন। অগস্ত্য তাঁর পত্নীর সঙ্গে বিন্ধ্যের কাছে গিয়ে বললেন, আমি কোনও কার্যের জন্য দক্ষিণ দিকে যাব, তুমি আমাকে পথ দাও। আমার ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর, তার পর ইচ্ছামত বর্ধিত হয়ো। অগস্ত্য দক্ষিণদিকে চ’লে গেলেন, কিন্তু আর ফিরলেন না, সেজন্য বিন্ধ্যপর্বতেরও আর বৃদ্ধি হ’ল না।