পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৮
মহাভারত

প্রজারা কষ্টে পড়ে। একজন মুনি রাজাকে বললেন, আপনি প্রায়শ্চিত্ত ক’রে ব্রাহ্মণদের কোপ শান্ত করুন এবং মুনিকুমার ঋষ্যশৃঙ্গকে আনান, তিনি আপনার রাজ্যে এলে তখনই বৃষ্টিপাত হবে।

 লোমপাদ প্রায়শ্চিত্ত ক’রে ব্রাহ্মণদের প্রসন্ন করলেন এবং ঋষ্যশৃঙ্গকে আনাবার জন্য শাস্ত্রজ্ঞ কর্মকুশল মন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তিনি প্রধান প্রধান বেশ্যাদের ডেকে আনিয়ে বললেন, তোমরা ঋষ্যশঙ্গকে প্রলোভিত ক’রে আমার রাজ্যে নিয়ে এস। বেশ্যারা ভীত হয়ে জানালে যে তা অসাধ্য। তখন এক বৃদ্ধবেশ্যা বললে, মহারাজ, আমি সেই তপোধনকে নিয়ে আসব, আমার যা যা আবশ্যক তা আমাকে দিন। রাজার নিকট সমস্ত প্রয়োজনীয় বস্তু ও ধনরত্নাদি পেয়ে সেই বৃদ্ধবেশ্যা একটি নৌকায় কৃত্রিম বৃক্ষ গুল্ম লতা ও পুষ্পফল দিয়ে সাজিয়ে রমণীয় আশ্রম নির্মাণ করলে এবং কয়েকজন রূপযৌবনবতী রমণীকে সঙ্গে নিয়ে বিভাণ্ডকের আশ্রমের অদূরে এসে নৌকা বাঁধলে।

 বিভাণ্ডক তাঁর আশ্রমে নেই জেনে নিয়ে সেই বৃদ্ধা তার বুদ্ধিমতী কন্যাকে উপদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দিলে। বেশ্যাকন্যা ঋষ্যশঙ্গের কাছে গিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করে বললে, আপনারা এই আশ্রমে সুখে আছেন তো? ফলমূলের অভাব নেই তো? আমি আপনাকে দেখতে এসেছি। ঋষ্যশৃঙ্গ বললেন, আপনাকে জ্যোতিঃপুঞ্জের ন্যায় দেখছি, আপনি আমার বন্দনীয়, পাদ্য ফল মূল দিয়ে আমি আপনার যথাবিধি সৎকার করব। এই কৃষ্ণাজিনাবৃত সুখাসনে সুখে উপবেশন করুন। আপনার আশ্রম কোথায়? আপনি দেবতার ন্যায় কোন্ ব্রত আচরণ করছেন?

 বেশ্যাকন্যা বললে, এই ত্রিযোজনব্যাপী পর্বতের অপর দিকে আমার রমণীয় আশ্রম আছে। আমার স্বধর্ম এই, যে আমি অভিবাদন বা পাদ্য জল গ্রহণ করতে পারি না। আপনি আমাকে অভিবাদন করবেন না, আমিই করব, আমার ব্রত অনুসারে আপনাকে আলিঙ্গন করব। ঋষ্যশৃঙ্গ বললেন, আমি আপনাকে পক্ক ভল্লাতক আমলক করুষক ইঙ্গুদ ধন্বন ও প্রিয়লক ফল দিচ্ছি, আপনি ইচ্ছানুসারে ভোজন করুন। বেশ্যাকন্যা উপহৃত ফলগুলি বর্জন ক’রে ঋষ্যশৃঙ্গকে মহামূল্য সুন্দর সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য, সুগন্ধ মাল্য, বিচিত্র উজ্জ্বল বসন এবং উত্তম পানীয় দিলে, তার পর নানাপ্রকার খেলা ও হাস্যপরিহাসে রত হ’ল। সে লতার ন্যায় বক্র হয়ে কন্দুক নিয়ে খেলতে লাগল এবং ঋষ্যশৃঙ্গের গায়ে গা দিয়ে বার বার আলিঙ্গন করলে। মুনিকুমারকে এইরূপে প্রলোভিত ক’রে এবং তাঁকে বিকারগ্রস্ত দেখে সে অগ্নিহোত্র-হোম করবার ছলে ধীরে ধীরে চ’লে গেল।