পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৯১

রূপবতী একটি কন্যা ছিল। ভৃগুপুত্র ঋচীক সেই কন্যাকে চাইলে গাধি বললেন, কৌলিক রীতি রক্ষা করা আমার কর্তব্য, আপনি যদি শুল্ক স্বরূপ আমাকে এক সহস্র দ্রুতগামী অশ্ব দেন যাদের কর্ণের এক দিক শ্যামবর্ণ এবং দেহ পাণ্ডুবর্ণ, তবে কন্যা দান করতে পারি। ঋচীক বরুণের নিকট ওইরূপ সহস্র অশ্ব চেয়ে নিয়ে গাধিকে দিলেন এবং তাঁর কন্যা সত্যবতীকে বিবাহ করলেন।

 একদিন সপত্নীক মহর্ষি ভৃগু তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূকে দেখতে এলেন। ভৃগু হৃষ্ট হয়ে বধূকে বললেন, সৌভাগ্যবতী, তুমি বর চাও। সত্যবতী নিজের এবং তাঁর মাতার জন্য পুত্র চাইলেন। ভৃগু বললেন, ঋতুস্নানের পর তোমার মাতা অশ্বত্থ বৃক্ষকে আলিঙ্গন করবেন, তুমি উডুম্বর বৃক্ষকে করবে, এবং দুজনে এই দুই চরু ভক্ষণ করবে। সত্যবতী ও তাঁর মাতা (গাধির মহিষী) বৃক্ষ আলিঙ্গন ও চরু ভক্ষণে বিপর্যয় করলেন। ভৃগু তা দিব্যজ্ঞানে জানতে পেরে সত্যবতীকে বললেন, তোমরা বিপরীত কার্য করেছ, তোমার মাতাই তোমাকে বঞ্চনা করেছেন। তোমার পুত্র ব্রাহণ হ’লেও বৃত্তিতে ক্ষত্রিয় হবে, তোমার মাতার পুত্র ক্ষত্রিয় হ’লেও আচারে ব্রাহ্মণ হবে। সত্যবতী বার বার অনুনয় করলেন, আমার পুত্র যেন ক্ষত্রিয়াচারী না হয়, বরং আমার পৌত্র সেইরূপ হ’ক। ভৃগু বললেন, তাই হবে। জমদগ্নি নামে খ্যাত এই পুত্র কালক্রমে সমগ্র ধনুর্বেদ ও অস্ত্রপ্রয়োগবিধি আয়ত্ত করলেন। তাঁর সঙ্গে রাজা প্রসেনজিতের কন্যা রেণুকার বিবাহ হ’ল। রেণুকার পাঁচ পুত্র, তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠ রাম (বিষ্ণুর অবতার পরশুরাম) গুণে শ্রেষ্ঠ।

 একদিন রেণুকা স্নান করতে গিয়ে দেখলেন, মার্তিকাবত দেশের রাজা চিত্ররথ তাঁর পত্নীদের সঙ্গে জলক্রীড়া করছেন। চিত্তবিকারের জন্য বিহ্বল ও ত্রস্ত হয়ে রেণুকা আর্দ্রদেহে আশ্রমে ফিরে এলেন। পত্নীকে অধীর ও ব্রাহ্মীশ্রীবর্জিত দেখে জমদগ্নি ধিক্‌কার দিয়ে ভর্ৎসনা করলেন এবং তাঁকে হত্যা করবার জন্য পুত্রদের একে একে আজ্ঞা দিলেন। মাতৃস্নেহে অভিভূত হয়ে চার পুত্র নীরবে রইলেন। জমদগ্নি ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁদের অভিশাপ দিলেন, তাঁরা পশুপক্ষীর ন্যায় জড়বুদ্ধি হয়ে গেলেন। তার পর পরশুরাম আশ্রমে এলে জমদগ্নি তাঁকে বললেন, পুত্র, দুশ্চরিত্রা মাতাকে বধ কর, ব্যথিত হয়ো না। পরশুরাম কুঠার দিয়ে তাঁর মাতার শিরশ্ছেদ করলেন। জমদগ্নি প্রসন্ন হয়ে বললেন, বৎস, আমার আজ্ঞায় তুমি দুষ্কর কর্ম করেছ, তোমার বাঞ্ছিত বর চাও। পরশরাম এই বর চাইলেন— মাতা জীবিত হয়ে উঠুন, তাঁর হত্যার স্মৃতি যেন না থাকে, আমার যেন পাপস্পর্শ না হয়, আমার ভ্রাতারা যেন তাঁদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পান, আমি