পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
মহাভারত

যেন যুদ্ধে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হই, এবং দীর্ঘায়ু লাভ করি। জমদগ্নি এই সকল বর দিলেন।

 একদিন জমদগ্নির পুত্রগণ অন্যত্র গেলে রাজা কার্তবীর্য আশ্রমে এসে সবলে হোমধেনুর বৎস হরণ করলেন এবং আশ্রমের বৃক্ষসকল ভগ্ন করলেন। পরশুরাম আশ্রমে ফিরে এসে পিতার নিকট সমস্ত শুনে কার্তবীর্যের প্রতি ধাবিত হলেন এবং তীক্ষ্ণ ভল্লের আঘাতে তাঁর সহস্র বাহু ছেদন ক’রে তাঁকে বধ করলেন। তখন কার্তবীর্যের পুত্রগণ আশ্রমে এসে জমদগ্নিকে আক্রমণ করলেন। তিনি তপোনিষ্ঠ ছিলেন সেজন্য মহাবলশালী হয়েও যুদ্ধ করলেন না, অনাথের ন্যায় ‘রাম রাম’ ব’লে পুত্রকে ডাকতে লাগলেন। কার্তবীর্যের পুত্রগণ তাঁকে বধ ক’রে চ’লে গেলেন।

 পরশুরাম আশ্রমে ফিরে এসে পিতাকে নিহত দেখে বহু বিলাপ করলেন এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন ক’রে একাকীই কার্তবীর্যের পুত্র ও অনুচরগণকে যুদ্ধে বিনষ্ট করলেন। তিনি একুশ বার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করে সমন্তপঞ্চক প্রদেশে পাঁচটি রুধিরময় হ্রদ সৃষ্টি করে পিতৃগণের তর্পণ করলেন। অবশেষে পিতামহ ঋচীকের অনুরোধে তিনি ক্ষত্রিয়হত্যা থেকে নিবৃত্ত হলেন এবং এক মহাযজ্ঞ সম্পন্ন ক’রে মহাত্মা কশ্যপকে একটি প্রকাণ্ড স্বর্ণময় বেদী দান করলেন। কশ্যপের অনুমতিক্রমে ব্রাহ্মণগণ সেই বেদী খণ্ড খণ্ড করে ভাগ করে নিলেন, সেজন্য তাঁদের নাম খাণ্ডবায়ন হ’ল। তার পর ক্ষত্রিয়ান্তক পরশুরাম সমগ্র পৃথিবী কশ্যপকে দান করলেন। তদবধি তিনি এই মহেন্দ্র পর্বতে বাস করছেন।

 চতুর্দশী তিথিতে মহাত্মা পরশুরাম পাণ্ডব ও ব্রাহ্মণদের দর্শন দিলেন। তাঁর অনুরোধে যুধিষ্ঠির এক রাত্রি মহেন্দ্র পর্বতে বাস করে পরদিন দক্ষিণ দিকে যাত্রা করলেন।

২৬। প্রভাস ―চ্যবন ও সুকন্যা ― অশ্বিনীকুমারদ্বয়

 পাণ্ডবগণ গোদাবরী নদী, দ্রবিড় দেশ, অগস্ত্য তীর্থ, সূর্পারক তীর্থ প্রভৃতি দর্শন ক’রে সুবিখ্যাত প্রভাসতীর্থে— উপস্থিত হলেন। তাঁদের আগমনের সংবাদ পেয়ে বলরাম ও কৃষ্ণ সসৈন্যে যুধিষ্ঠিরের কাছে এলেন। পাণ্ডবগণ ভূমিতে শয়ন করেন, তাঁদের গাত্র মলিন, এবং সুকুমারী দ্রৌপদীও কষ্টভোগ করছেন দেখে সকলে অতিশয় দুঃখিত হলেন। বলরাম কৃষ্ণ প্রদ্যুম্ন শাম্ব সাত্যকি প্রভৃতি

-