পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৯৩

বৃষ্ণিবংশীয় বীরগণ যুধিষ্ঠির কর্তৃক যথাবিধি সম্মানিত হয়ে তাঁকে বেষ্টন ক’রে উপবেশন করলেন।

 গোদুগ্ধ কুন্দপুষ্প ইন্দু মৃণাল ও রজতের ন্যায় শুভ্রবর্ণ বলরাম বললেন, ধর্মাচরণ করলেই মঙ্গল হয় না, অধর্ম করলেই অমঙ্গল হয় না। মহাত্মা যুধিষ্ঠির জটা ও চীর ধারণ ক’রে বনবাসী হয়ে ক্লেশ পাচ্ছেন, আর দুর্যোধন পৃথিবী শাসন করছেন, এই দেশে অল্পবুদ্ধি লোকে মনে করবে ধর্মের চেয়ে অধর্মের আচরণই ভাল। ভীষ্ম কৃপ দ্রোণ ও ধৃতরাষ্ট্রকে ধিক, পাণ্ডবদের বনে পাঠিয়ে তাঁরা কি সুখ পাচ্ছেন? ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের নির্বাসন আর দুর্যোধনের বৃদ্ধি দেখে পৃথিবী বিদীর্ণ হচ্ছেন না কেন?

 সাত্যকি বললেন, এখন বিলাপের সময় নয়, যুধিষ্ঠির কিছু না বললেও আমাদের যা কর্তব্য তা করব। আমরা ত্রিলোক জয় করতে পারি, বৃষ্ণি ভোজ অন্ধক প্রভৃতি যদুবংশের বীরগণ আজই সসৈন্যে যাত্রা করে দুর্যোধনকে যমালয়ে পাঠান। ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির তাঁর প্রতিজ্ঞা পালন করুন, তাঁর বনবাসের কাল সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিমন্যু রাজ্য শাসন করবে।

 কৃষ্ণ বললেন, সাত্যকি, আমরা তোমার মতে চলতাম, কিন্তু যা নিজ ভুজবলে বিজিত হয় নি এমন রাজ্য যুধিষ্ঠির চান না। ইনি এঁর ভ্রাতারা, এবং দ্রুপদকন্যা, কেউ স্বধর্ম ত্যাগ করবেন না।

 যুধিষ্ঠির বললেন, সত্যই রক্ষণীয়, রাজ্য নয়। একমাত্র কৃষ্ণই আমাকে যথার্থভাবে জানেন, আমিও তাঁকে জানি। সাত্যকি, পুরুষশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ যখন মনে করবেন যে বলপ্রকাশের সময় এসেছে তখন তোমরা দুর্যোধনকে জয় ক’রো।


 যাদবগণ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। যুধিষ্ঠিরাদি পুনর্বার যাত্রা ক’রে পুণ্যতোয়া পয়োষ্ণী নদী অতিক্রম ক’রে নর্মদার নিকটস্থ বৈদূর্য পর্বতে উপস্থিত হলেন। লোমশ এই আখ্যান বললেন।— মহর্ষি ভৃগুর পুত্র চ্যবন এই স্থানে দীর্ঘকাল তপস্যা করেছিলেন, তাঁর দেহ বল্মীক পিপীলিকা ও লতায় আবৃত হয়ে যায়। একদিন রাজা শর্যাতি এখানে বিহার করতে এলেন, তাঁর চার হাজার স্ত্রী এবং সুকন্যা নামে এক রূপবতী কন্যা ছিল। সুকন্যাকে সেই মনোরম স্থানে বিচরণ করতে দেখে চ্যবন আনন্দিত হয়ে ক্ষীণকণ্ঠে তাঁকে ডাকলেন। সুকন্যা