পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৯৫

নামক এক মহাবীর্য মহাকায় ঘোরদর্শন কৃত্যা[১] উদ্‌ভূত হয়ে মুখব্যাদান ক’রে ইন্দ্রকে গ্রাস করতে গেল। ভয়ে ওষ্ঠ লেহন করতে করতে ইন্দ্র চ্যবনকে বললেন, ব্রহ্মর্ষি, প্রসন্ন হ’ন, আজ থেকে দুই অশ্বিনীকুমারও সোমপানের অধিকারী হবেন। চ্যবন প্রসন্ন হ’য়ে ইন্দ্রের স্তম্ভিত বাহদ্বয় মুক্ত করলেন এবং মদকে বিভক্ত ক’রে সুরাপান, স্ত্রী, দ্যূত ও মৃগয়ায় স্থাপিত করলেন। শর্যাতির যজ্ঞ সমাপ্ত হ’ল, চ্যবন তাঁর ভার্যার সঙ্গে বনে চলে গেলেন।

২৭। মান্ধাতা, সোমক ও জন্তুর ইতিহাস

 পাণ্ডবগণ নানা তীর্থ দর্শন ক’রে যমুনা নদীর তীরে উপস্থিত হলেন, যেখানে মান্ধাতা ও সোমক রাজা যজ্ঞ করেছিলেন। লোমশ এই ইতিহাস বললেন ৷—

 ইক্ষ্বাকুবংশে যুবনাশ্ব নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি মন্ত্রীদের উপর রাজ্যভার দিয়ে বনে গিয়ে সন্তান কামনায় যোগসাধনা করতে লাগলেন। একদিন তিনি ক্লান্ত ও পিপাসার্ত হয়ে চ্যবন মুনির আশ্রমে প্রবেশ করে দেখলেন যজ্ঞবেদীর উপর এক কলস জল রয়েছে। যুবনাশ্ব জল চাইলেন, কিন্তু তাঁর ক্ষীণ কণ্ঠস্বর কেউ শুনতে পেলেন না। তখন তিনি জলপান ক’রে অবশিষ্ট জল কলস থেকে ফেলে দিলেন। চ্যবন ও অন্যান্য মুনিরা নিদ্রা থেকে উঠে দেখলেন, কলস জলশূন্য। যুবনাশ্বের স্বীকারোক্তি শুনে চ্যবন বললেন, রাজা, আপনি অনুচিত কার্য করেছেন, আপনার পুত্রোৎপত্তির জন্যই এই তপঃসিদ্ধ জল রেখেছিলাম। জলপান করার ফলে আপনিই পুত্র প্রসব করবেন কিন্তু গর্ভধারণের ক্লেশ পাবেন না। শতবর্ষ পূর্ণ হ’লে যুবনাশ্বের বাম পার্শ্ব ভেদ করে এক সূর্যতুল্য তেজস্বী পুত্র নির্গত হ’ল। দেবতারা শিশুকে দেখতে এলেন। তাঁরা বললেন, এই শিশু কি পান করবে? ‘মাং ধাস্যতি’ — আমাকে পান করবে — এই ব’লে ইন্দ্র তার মুখে নিজের তর্জনী পুরে দিলেন, সে চুষতে লাগল। এজন্য তার নাম হল মান্ধাতা। মান্ধাতা বড় হয়ে ধনুর্বেদে পারদর্শী এবং বিবিধ দিব্যাস্ত্র ও অভেদ্য কবচের অধিকারী হলেন। স্বয়ং ইন্দ্র তাঁকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করলেন। মান্ধাতা ত্রিভুবন জয় এবং বহু যজ্ঞ ক’রে ইন্দ্রের অর্ধাসন লাভ করেছিলেন।

  1. অভিচার ক্রিয়ার জন্য আবির্ভূত দেবতা।