পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
১৯৯

করতে এসে পরাস্ত হয়েছেন। অষ্টাবক্র বললেন, বন্দী আমার তুল্য প্রতিপক্ষ পান নি তাই বিচারসভায় সিংহের ন্যায় আস্ফালন করেন। আমার সঙ্গে বিতর্কে তিনি পরাস্ত হয়ে ভগ্নচক্র শকটের ন্যায় পথে প’ড়ে থাকবেন। তখন রাজা জনক অষ্টাবক্রকে বিবিধ দুরূহ প্রশ্ন করলেন এবং তার সদুত্তর পেয়ে বললেন, দেবতুল্য বালক, বাক্‌পটুতায় তোমার সমান কেউ নেই, তুমি বালক নও, স্থবির। তোমাকে আমি দ্বার ছেড়ে দিচ্ছি। অষ্টাবক্র সভায় প্রবেশ ক’রে বন্দীর সঙ্গে বিচারে প্রবৃত্ত হলেন। অনেক প্রশ্ন উত্তর ও প্রত্যুত্তরের পর বন্দী অধোমুখে নীরব হলেন। সভায় মহা কোলাহল উঠল, ব্রাহ্মণগণ কৃতাঞ্জলি হ’য়ে সসম্মানে অষ্টাবক্রের কাছে এলেন। অষ্টাবক্র বললেন, এই বন্দী ব্রাহ্মণদের জয় ক’রে জলে ডুবিয়েছিলেন, এখন এঁকেই আপনারা ডুবিয়ে দিন। বন্দী বললেন, আমি বরুণের পুত্র, জনক রাজার এই বজ্ঞের সমকালে বরুণও এক যজ্ঞ আরম্ভ করেছেন, আমি ব্রাহ্মণদের জলমজ্জিত ক’রে সেই যজ্ঞ দেখতে পাঠিয়েছি, তাঁরা এখন ফিরে আসছেন। আমি অষ্টাবক্রকে সম্মান করছি, তাঁর জন্যই আমি (জলমজ্জিত হয়ে) পিতার সঙ্গে মিলিত হব। অষ্টাবক্রও তাঁর পিতা কহোড়কে এখনই দেখতে পাবেন।

 অনন্তর কহোড় ও অন্যান্য ব্রাহ্মণগণ বরুণের নিকট পূজা লাভ করে জনকের সভায় ফিরে এলেন। কহোড় বললেন, মহারাজ, এই জন্যই লোকে পুত্রকামনা করে, আমি যা করতে পারি নি আমার পুত্র তা করেছে। তার পর বন্দী সমুদ্রে প্রবেশ করলেন, পিতা ও মাতুলের সঙ্গে অষ্টাবক্রও উদ্দালকের আশ্রমে ফিরে এলেন। কহোড় তাঁর পুত্রকে বললেন, তুমি শীঘ্র এই নদীতে প্রবেশ কর। পিতার আজ্ঞা পালন ক’রে অষ্টাবক্র নদী থেকে অবক্র সমান-অঙ্গ হয়ে উত্থিত হলেন। সেই কারণে এই নদী সমঙ্গা নামে খ্যাত।

৩০। ভরদ্বাজ, যবক্রীত, রৈভ্য, অর্বাবসু ও পরাবসু

 লোমশ বললেন, যুধিষ্ঠির, এই সেই সমঙ্গা বা মধুবিলা নদী, বৃত্রবধের পর ইন্দ্র যাতে স্নান ক’রে সর্ব পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। এই ঋষিগণের প্রিয় কনখল পর্বত, এই মহানদী গঙ্গা, ওই রৈভ্যাশ্রম যেখানে ভরদ্বাজপুত্র যবক্রীত বিনষ্ট হয়েছিলেন। সেই ইতিহাস শোন।—

 ভরদ্বাজ তাঁর সখা রৈভ্যের নিকটেই বাস করতেন। রৈভ্য এবং তাঁর দুই