পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপর্ব
২০১

অগ্নিহোত্রগৃহে আশ্রয় নিতে গেলেন, কিন্তু সেই গৃহের রক্ষী এক অন্ধ শূদ্র তাঁকে সবলে দ্বারদেশে ধ’রে রাখলে। তখন রাক্ষস শূলের আঘাতে যবক্রীতকে বধ করলে।

 পুত্রের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ভরদ্বাজ বিলাপ করতে লাগলেন— পুত্র, তুমি ব্রাহ্মণদের জন্য তপস্যা করেছিলে যাতে তাঁরা অধ্যয়ন না ক’রেই বেদজ্ঞ হ’তে পারেন। ব্রাহ্মণের হিতার্থী ও নিরপরাধ হয়েও কেন তুমি বিনষ্ট হ’লে? আমার নিষেধ সত্ত্বেও কেন রৈভ্যের আশ্রমে গিয়েছিলে? আমি বৃদ্ধ, তুমি আমার একমাত্র পুত্র, তথাপি দুর্মতি রৈভ্য আমাকে পুত্রহীন করলেন। রৈভ্যও শীঘ্র তাঁর কনিষ্ঠ পত্র কর্তৃক নিহত হবেন। এইরূপ অভিশাপ দিয়ে ভরদ্বাজ পুত্রের অগ্নিসৎকার করে নিজেও অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন দিলেন।

 এই সময়ে রাজা বৃহদ্‌দ্যুম্ন এক যজ্ঞ করছিলেন। সাহায্যের জন্য রৈভ্যের দুই পুত্র সেখানে গিয়েছিলেন, আশ্রমে কেবল রৈভ্য ও তাঁর পুত্রবধূ ছিলেন। একদিন পরাবসু আশ্রমে আসছিলেন, তিনি শেষরাত্রে বনমধ্যে কৃষ্ণাজিনধারী পিতাকে দেখে মৃগ মনে ক’রে আত্মরক্ষার্থ তাঁকে বধ করলেন। পিতার অন্ত্যেষ্টি ক’রে পরাবসু যজ্ঞস্থানে ফিরে গিয়ে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অর্বাবসুকে বললেন, আমি মৃগ মনে ক’রে পিতাকে বধ করেছি। আপনি আশ্রমে ফিরে গিয়ে আমার হয়ে ব্রহ্মহত্যার প্রায়শ্চিত্ত করুন, আমি একাকীই এই যজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারব। অর্বাবসু সম্মত হয়ে আশ্রমে গেলেন এবং প্রায়শ্চিত্তের পর যজ্ঞস্থানে ফিরে এলেন। তখন পরাবসু হষ্ট হয়ে রাজা বৃহদ্‌দ্যুম্নকে বললেন, এই ব্রহ্মহত্যাকারী যেন আপনার যজ্ঞ না দেখে ফেলে, তা হ’লে আপনার অনিষ্ট হবে। বাজা অর্বাবসুকে তাড়িয়ে দেবার জন্য ভৃত্যদের আজ্ঞা দিলেন। অর্বাবসু বার বার বললেন, আমার এই ভ্রাতাই ব্রহ্মহত্যা করেছে, আমি তাকে সেই পাপ থেকে মুক্ত করেছি। তাঁর কথায় কেউ বিশ্বাস করলে না দেখে অর্বাবসু বনে গিয়ে সূর্যের আরাধনায় নিরত হলেন। মূর্তিমান সূর্য ও অন্যান্য দেবগণ প্রীত হয়ে অর্বাবসুকে সংবর্ধনা এবং পরাবসুকে প্রত্যাখান করলেন। অর্বাবসুর প্রার্থনায় দেবগণ বর দিলেন, তার ফলে রৈভ্য ভরদ্বাজ ও যবক্রীত পুনর্জীবিত হলেন, পরাবসুর পাপ দূর হ’ল, রৈভ্য বিস্মৃত হলেন যে পরাবসু তাঁকে হত্যা করেছিলেন, এবং সূর্যমন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হ’ল।

 জীবিত হয়ে যবক্রীত দেবগণকে বললেন, আমি বেদাধ্যায়ী তপম্বী ছিলাম তথাপি রৈভ্য আমাকে কি করে বধ করতে পারলেন? দেবতারা বললেন, তুমি গুরুর সাহায্য না নিয়ে (কেবল তপস্যার প্রভাবে) বেদপাঠ করেছিলে, আর রৈভ্য