পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৬
মহাভারত

হনুমান তাঁর দেহ সংকুচিত করে ভীমকে আলিঙ্গন করলেন। ভীমের সকল শ্রম দূর হ’ল, তাঁর বোধ হ’ল তিনি অত্যন্ত বলশালী হয়েছেন। হনুমান বললেন, কুন্তীপুত্র, যদি চাও তবে আমি ক্ষুদ্র ধৃতরাষ্ট্রপুত্রদের সংহার করব, শিলার আঘাতে হস্তিনাপর বিমর্দিত করব। ভীম বললেন, মহাবাহু, আপনার প্রসাদেই আমরা শত্রুজয় করব। হনুমান বললেন, তুমি যখন যুদ্ধে সিংহনাদ করবে তখন আমিও তার সঙ্গে আমার কণ্ঠস্বর যোগ করব; আমি অর্জুনের ধ্বজের উপরে বসে প্রাণান্তকর দারুণ নিনাদ করব; তাতে তোমরা অনায়াসে শত্রুবধ করতে পারবে। এই ব’লে হনুমান অন্তর্হিত হলেন।

৩৩। ভীমের পদ্মসংগ্রহ

 ভীম গন্ধমাদনের উপর দিয়ে হনুমানের প্রদর্শিত পথে যাত্রা করলেন। দিনশেষে তিনি বনমধ্যে হংস কারণ্ডব ও চক্রবাকে সমাকীর্ণ একটি বৃহৎ নদী দেখতে পেলেন, তার জল অতি নির্মল এবং পরম সুন্দর স্বর্ণময় দিব্য পদ্মে আচ্ছন্ন। এই নদী কৈলাসশিখর ও কুবেরভবনের নিকটবর্তী, ক্রোধবশ নামক রাক্ষসগণ তা রক্ষা করে। মৃগচর্মধারী স্বর্ণাঙ্গদভূষিত ভীম নিঃশঙ্কচিত্তে খড়্‌গহস্তে পদ্ম নিতে আসছেন দেখে রাক্ষসগণ তাঁকে প্রশ্ন করলে, মুনিবেশধারী অথচ সশস্ত্র কে তুমি? ভীম তাঁর পরিচয় দিয়ে জানালেন যে তিনি দ্রৌপদীর জন্য পদ্ম নিতে এসেছেন। রাক্ষসরা বললে, এখানে কুবের ক্রীড়া করেন, মানুষ এখানে আসতে পারে না। যক্ষরাজের অনুমতি না নিয়ে যে আসে সে বিনষ্ট হয়। তুমি ধর্মরাজের ভ্রাতা হয়ে সবলে পদ্ম হরণ করতে এসেছ কেন? ভীম বললেন, যক্ষপতি কুবেরকে তো এখানে দেখছি না, আর তাঁর দেখা পেলেও আমি অনুমতি চাইতে পারি না, কারণ ক্ষত্রিয়রা প্রার্থনা করেন না, এই সনাতন ধর্ম। তা ছাড়া এই নদীর উৎপত্তি পর্বতনির্ঝর থেকে, কুবেরভবনে নয়, সকলেরই এতে সমান অধিকার।

 নিষেধ অগ্রাহ্য ক’রে ভীম জলে নামছেন দেখে রাক্ষসরা তাঁকে মারবার জন্য ধাবিত হ’ল। শতাধিক রাক্ষস ভীমের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হ’ল, আর সকলে কৈলাস পর্বতে পালিয়ে গেল। ভীম তখন নদীতে নেমে অমৃততুল্য জল পান করলেন এবং পদ্মতরু উৎপাটিত ক’রে অনেক পদ্ম সংগ্রহ করলেন। পরাজিত রাক্ষসদের কাছে সমস্ত শুনে কুবের হেসে বললেন, আমি সব জানি, কৃষ্ণার জন্য ভীম ইচ্ছামত পদ্ম নিন।