পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনপৰ্ব
২০৭

 সেই সময়ে বদরিকাশ্রমে বালুকাময় খরস্পর্শ বায়ু বইতে লাগল, উল্কাপাত হ’ল, এবং অন্যান্য দুর্লক্ষণ দেখা গেল। বিপদের আশঙ্কায় যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসা করলেন, ভীম কোথায়? দ্রৌপদী জানালেন যে ভীম তাঁর অনুরোধে পদ্ম আনতে গেছেন। যুধিষ্ঠির বললেন, আমরাও শীঘ্র সেখানে যাব। তখন ঘটোৎকচ তাঁর অনুচরদের সাহায্যে যুধিষ্ঠিরাদি, দ্রৌপদী, লোমশ ও অন্যান্য ব্রাহ্মণদের বহন ক’রে ভীমের নিকট উপস্থিত হলেন। যুধিষ্ঠির দেখলেন, অনেক যক্ষ নিহত হয়ে প’ড়ে আছে, ক্রুদ্ধ ভীম স্তব্ধনয়নে ওষ্ঠ দংশন ক’রে গদা তুলে নদীতীরে দাঁড়িয়ে আছেন। যুধিষ্ঠির বললেন, ভীম, একি করেছ? এতে দেবতারা অসন্তুষ্ট হবেন আর এমন ক’রো না। সেই সময়ে উদ্যানরক্ষিগণ এসে সকলকে প্রণাম করলে। যুধিষ্ঠির সেই রাক্ষসদের সান্ত্বনা দিলে তারা কুবেরের কাছে ফিরে গেল।

 পাণ্ডবগণ অর্জুনের প্রতীক্ষায় গন্ধমাদনের সেই সানুদেশে কিছুকাল সুখে যাপন করলেন। তার পর একদিন যুধিষ্ঠির তাঁর ভ্রাতাদের বললেন, মহাত্মা লোমশ আমাদের বহু তীর্থ দেখিয়েছেন, বিশালা বদরী এবং এই দিব্য নদীও আমরা দেখেছি, এখন কোন্ উপায়ে আমরা কুবেরভবনে যাব তা ভেবে দেখ। এই সময়ে আকাশবাণী হ’ল— এখান থেকে কেউ সেখানে যেতে পারে না। আপনি বদরিকাশ্রমে ফিরে গিরে সেখান থেকে বৃষপর্বার আশ্রম হয়ে আর্ষ্টিষেণের আশ্রমে যান, তা হলে কুবেরভবন দেখতে পাবেন। আকাশবাণী শুনে সকলে বদরিকায় ফিরে গেলেন।


॥ জটাসুরবধপর্বাধ্যায় ॥

৩৪। জটাসুরবধ

 জটাসুর নামে এক রাক্ষস ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে পাণ্ডবদের সঙ্গে বাস করত। সর্বশাস্ত্রজ্ঞ উত্তম ব্রাহ্মণ ব’লে সে নিজের পরিচয় দিত, যুধিষ্ঠির অসন্দিগ্ধমনে সেই পাপীকে পালন করতেন। একদিন ভীম মৃগয়ায় গেছেন, ঘটোৎকচ ও তাঁর অনুচর রাক্ষসরাও আশ্রমে নেই, এবং লোমশ প্রভৃতি মহর্ষিরা ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন, এই সুযোগে জটাসুর বিকট রূপ ধারণ ক’রে যুধিষ্ঠির নকুল সহদেব দ্রৌপদী এবং পাণ্ডবদের সমস্ত অস্ত্র হরণ করে নিয়ে চলল। সহদেব বিশেষ চেষ্টা করে তার বাহপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করলেন এবং খড়্‌গ কোষমুক্ত ক’রে উচ্চকণ্ঠে ভীমকে ডাকতে লাগলেন। যুধিষ্ঠির জটাসুরকে বললেন, দূর্বুদ্ধি, তুমি আমাদের আশ্রমে